পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কমরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা উত্তম নন্দী। পেশায় কৃষক উত্তম নন্দীর,পরিবার বলতে স্ত্রী ও দুই ছেলে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিষ খাওয়ায় গত বছর ১৭ নভেম্বর দুপুর নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা তাঁকে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন ওইদিনই রাতেই মৃত্যু হয় উত্তম নন্দীর।
মৃত উত্তম নন্দীর ছোটো ছেলে বলরাম নন্দী। তিনি জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বাবার ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হয়। আবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি তাঁর মোবাইলে ম্যাসেজ আসে এবং একটি লিঙ্কও তার সঙ্গে দেওয়া হয়। মেসেজে বলা হয়, তাঁর বাবার ডেথ সার্টিফিকেট সাবমিট হয়ে গিয়েছে। মেসেজের সঙ্গে দেওয়া লিঙ্ক থেকে বাবার ডেথ সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা হয়। কিন্তু এরপর ম-কে নিয়ে সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে গ্যাসের অফিসে বই সংশোধন ও লিঙ্ক করাতে গিয়ে জানতে পারেন, বাবার যে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে তা ভুল। মৃত উত্তম নন্দীর জায়গায় তার ছোটো ছেলে বলরাম নন্দীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছে।
মৃত বাবার নামের জায়গায় তাঁর নাম রয়েছে জানতে পেরে হকচকিয়ে যান ছেলে বলরাম নন্দী। মৃতের ছেলের অভিযোগ, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের গাফিলতির জেরেই এত বড়ো ভুল হয়েছে। আর এর জেরে তাঁর বাবার নামে থাকে গ্যাসের বই মায়ের নামে সংশোধন থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য কাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঘটনা জানাজানি হতেই পড়ে গিয়েছে শোরগোল। জেলা সদর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মতো একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এমন গাফিলতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্নমহলে। মৃতের ছেলের দাবি, এই ভুল সংশোধন করে যাতে তাঁর বাবার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা করুক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এই বিষয় নিয়ে হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত কুমার রাউত বলেন, ‘বিষয়টা আমরা দেখে নিচ্ছি, কোনও টেকনিক্যাল প্রব্লেম হয়ে থাকতে পারে, আমরা সেটা চেক করে দেখে নেব। ওটা কারেকশন হয়ে যাবে, যদি আমাদের তরফ থেকে কোনও ভুল থাকে।’ তবে গোটা ঘটনা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সহসভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, ‘চিকিৎসা ব্যবস্থায় যা দুরাবস্থা, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার প্রতিচ্ছবি বারবার দেখা যাচ্ছে। এখানকার হাসপাতাল সুপার এবং সিএমওএইচকে বলব যে হাসপাতালগুলোকে যেভাবে ডাস্টবিনে পরিণত করছেন, জীবন নিয়ে ছেলে খেলা করছেন এবং ভুল চিকিৎসায় মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত ঠেলে দিচ্ছেন…, আর আজকে সার্টিফিকেট ভুল দেওয়া প্রমাণ করে যে আপনারা কাজের প্রতি কতটা সচেতন, এটা লজ্জার বিষয়!’