Kolkata Book Fair 2024 : ১১৭ নম্বর! বুকস্টল নয়, ফুড কুপন – kolkata book fair 2024 crowd was seen in front of food stall


শ্যামগোপাল রায়, অর্ণব চক্রবর্তী

ও দাদা, সামনে কত নম্বর? এই তো চুরাশি। আপনি? আমার ১১৭। আর কদ্দূর?

এ কথোপকথন বইমেলার ভিড়ে পছন্দের প্রকাশনার স্টল খুঁজে বেড়ানো বইপোকাদের নয়। খাবারের অপেক্ষায় কুপন হাতে ফুড স্টলের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের। শীতের আমেজ মাখা রবিবাসরীয় দুপুরে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ করুণাময়ীর মাঠে ভিড় জমালেন বটে। কিন্তু কেনাকাটির হিড়িকটা মূলত রয়ে গেল ফুড স্টল আর ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ় ঘিরেই। গরম ফিশফ্রাই, মোমো হাতে পেতে কেউ কেউ দাঁড়ালেন ৪৫ মিনিট। পছন্দের বই কিনতে অত ক্ষণ অপেক্ষা দেখা গেল না।

বিকেলে কি পাল্টে গেল ছবিটা?

নাহ। সে আশাও বৃথা। সন্ধে ৬টা নাগাদ পত্রভারতীর স্টলে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে কমপক্ষে ২৫ জন। ভিতরেও ভিড়। কিন্তু কাউকেই ৫-৭ মিনিটের বেশি লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে না। কারণ ভিতরে যাঁরা ঢুকছেন, তাঁদের অর্ধেকই বই হাতে তুলছেন না। বরং ‘উইন্ডো শপিং’ করেই বেরিয়ে যাচ্ছেন স্টল থেকে। অথচ ছোট জুটব্যাগ, গলার হার, কানের দুলের দোকানে দেখার মতো ভিড়।

বিক্রিবাটাও মন্দ নয়। ওদিকে প্রায় লাইন পড়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিলের রোলিং সেলফি স্ট্যান্ড, টেলিফোন বুথ ইনস্টলেশন, থাইল্যান্ড স্টলের সেলফি জোন, টুকটুক অটো সেলফি জোনে — সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড হবে যে! যে সংখ্যায় মানুষ বইমেলায় এখন আসেন, সেই তুলনায় বই বিক্রি হয় না — এ অনুযোগ বহুদিনের। রবিবারের খণ্ডচিত্র আপাত ভাবে সেই অনুযোগের পাল্লাকেই ভারী করবে। তবে বইমেলার আয়োজক, পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে’র দাবি, ‘গত বছরের তুলনায় রবিবারে বই বিক্রির সংখ্যা অনেক বেশি বলেই প্রকাশনা সংস্থাগুলি আমাদের জানিয়েছে।’

বইয়ের স্টলের তুলনায় খাবারের স্টলের সংখ্যা অনেক কম বলেই সেখানকার ভিড় চোখে পড়ছে বলে দাবি সুধাংশুর। বই না হয় টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এমন ফেস্টিভ এরিনায় বৌদ্ধিক চর্চা তো নিখরচায়। অথচ বইমেলার সাজানো অডিটোরিয়ামে চলতে থাকা সেমিনারগুলো দাঁড়িয়ে শোনার লোক হাতেগোনা। এ দিকে সেই সব বুকস্টলের সামনে ভিড়, যেখানে ক্যুইজ খেলে আকর্ষণীয় পুরস্কার পাওয়া যাচ্ছে।

তবে পরিবেশপ্রেমীদের খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকছে বইমেলায়। বই বিক্রির ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার প্রায় নেই। বড় প্রকাশনী সংস্থার স্টলে কাগজ বা চটের ব্যাগে কিংবা পুনরায় ব্যবহার করা যায় এমন প্লাস্টিক প্যাকেটে বিক্রি হচ্ছে বই। অনেকেই আবার বই কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঙ্গে এনেছিলেন কাপড়ের তৈরি ব্যাগ।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেলায় এসেছিলেন লেকটাউনের বাসিন্দা অনুপম চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘চারটি স্টল থেকে বই কিনেছি। কেউই কিন্তু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেয়নি।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘যে ভাবে দূষণ বাড়ছে, তাতে বেআইনি প্লাস্টিকের ব্যবহারে রাশ টানা উচিত। দেখে ভালো লাগছে, দেরিতে হলেও বইমেলায় প্লাস্টিকের ব্যবহারে রাশ টানা গিয়েছে।’

Kolkata Book Fair 2024 : ১০ না ২০? বইমেলার ডিসকাউন্ট-ডিবেট সোশ্যাল মিডিয়াতেও
বইমেলার আয়োজক পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তারা জানাচ্ছেন, বইমেলাকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে বইপ্রেমী এবং বিক্রেতাদের কাছে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার না করার আবেদন জানানো হয়েছিল। ক্রেতাদের বাড়ি থেকেই কাপড় বা কাগজের ব্যাগ নিয়ে আসার অনুরোধও করা হয়। তাতে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *