কীভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা অনেকেই এ ভাবে চাল ও কার্ড বিলি নিয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি। আর সেটা হয়নি বলেই এদিন ফিনান্স অফিসার তাঁর চেম্বারে ঘটা করে পুজো করার সাহস পেয়েছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়, সেটা অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, এটা দুঃখের।’
ঘটনার কথা জানতে পেরে অবাক হয়ে যান জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলি বিল্ডিংয়ে ফিনান্স অফিসার সৌগত চক্রবর্তীর ঘরে পুজো শুরু হয় বেলা ১২টা নাগাদ। ধূপ-ধুনো দিয়ে, সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চলে পুজো। পুজো শেষে উপস্থিত অনেকের হাতে প্রসাদ হিসেবে পায়েস দেওয়া হয়।
যদিও ফিনান্স অফিসার সৌগতর দাবি, পুজো নয়, পিকনিক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে মাঝেমধ্যেই পিকনিক নয়। সেটা আমার চেম্বারে নয়, পাশের ঘরে হয়। এদিনও তেমনই হয়েছে। সেখান থেকেই পায়েস দেওয়া হয়েছে সবাইকে।’ কিন্তু পিকনিকে কি পায়েস রান্না হয়? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দেননি। একই ভাবে অফিস টাইমে কীভাবে মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিকনিক হয় তারও কোনও জবাব ছিল না সৌগত চক্রবর্তীর কাছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরির বক্তব্য, ‘ফিনান্স অফিসারের চেম্বারে পুজো হওয়ার বিষয়টি কানে এসেছে। সেখানে প্রসাদ হিসেবে পায়েস দেওয়া হয়েছে বলেও শুনেছি। আমাকে উপাচার্য ফোন করেছিলেন। আমি সৌগতবাবুকে ফোনে পাচ্ছি না। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করব। এর আগেও রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাল ও কার্ড বিতরণের অভিযোগ এসেছিল। আমরা জানতে পেরে সেটা বন্ধ করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালের অস্থায়ী উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সরস্বতী পুজো ছাড়া কোনও ধর্মীয় আচরণ করা বেআইনি। আমি রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছি। একইসঙ্গে নতুন করে নোটিফিকেশন জারি করতে বলেছি, একমাত্র সরস্বতী পুজো ছাড়া অন্য কোনও কিছু করা যাবে না।’
বিষয়টি জানাজানি হতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পূর্ব বর্ধমানে সভা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসার আগে এই ঘটনায় রাজনৈতিক রংও লেগেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘চাল, কার্ড বিতরণ করে রামমন্দিরের নামে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কেউ তাতে সাড়া দেয়নি। আর ফিনান্স অফিসার যে কাজ করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ আর ধিক্কার জানাচ্ছি।’