মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পরে এদিন সন্ধ্যায় সরকারি স্পেশাল পিপি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এরা যাতে সংশ্লিষ্ট ধারায় সর্বোচ্চ সাজা পায়, আদালতে সেই আবেদন জানাব। অপরাধ প্রমাণে আদালতে ডিজিটাল এভিডেন্স কাজে আসা, চার্জগঠনের মাত্র দু’মাসের মধ্যে ধৃতদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা ইত্যাদি সব মিলিয়ে এটি একটি ল্যান্ড মার্ক মামলা।’
এ দিন যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেই চার জনের নাম কুন্দনকুমার যাদব, রাজকুমার পাসওয়ান, ছোট্টু পাসওয়ান ও রিক্কি পাসওয়ান। ডাকাতির ঘটনায় পঞ্চম ধৃত মণিকান্ত যাদব জখম হয়ে ধরা পড়ার পরে হাসপাতালে মারা যায়। আসামিদের পক্ষের দুই আইনজীবী এ দিন বলেন, ‘মক্কেলরা উচ্চ আদালতে আবেদন জানাবেন।’
গত বছর ২৯ অগস্ট বিকেল তিনটে নাগাদ রানাঘাট রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকের লেভেল ক্রসিং সংলগ্ন রাস্তার ধারে সোনার গয়নার নামী শোরুমে বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আট জন সশস্ত্র ডাকাতের বিরুদ্ধে এএসআই র্যাঙ্কের এক পুলিশ অফিসার একটি মাত্র আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সাহসী লড়াই চালান। তার আগে দোতলার সিসিটিভি থেকে নীচের তলায় ডাকাতির ঘটনা দেখে লুকিয়ে রানাঘাট থানার আইসিকে ফোন করতে পেরেছিলেন ওই সোনার গয়নার শোরুমের এক মহিলাকর্মী।
সেই ফোন পেয়েই রানাঘাট থানার আইসি তাঁর বাহিনী নিয়ে দ্রুত এলাকা ঘিরে ফেলেন বলেই ডাকাতদের মধ্যে পাঁচ জন ধরা পড়ে। তাদের মধ্যে দু’জন জখম ছিল। পরে হাসপাতালে মণিকান্ত যাদব নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিন ডাকাত অবশ্য পালিয়ে যায়।
মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই মামলার ট্রায়াল শুরু হয়েছিল গত ২৯ নভেম্বর। আর তারপর মাত্র এক মাস ২৫ দিনের মধ্যে দোষী সাব্যস্তও হল। ৩৫ জন সাক্ষ্য দেন। এই মামলাকে দেশের ইতিহাসে ল্যান্ড মার্ক মামলা বলব।’ কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্ধার হওয়া গয়নার প্রতিটিতে হলমার্ক ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন (HUID) নম্বর ছিল। ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মোবাইল অ্যাপে ওই নম্বর দিয়ে জানা যায়, গয়নাগুলো কতটা শুদ্ধ, কবে-কোথায় তৈরি ইত্যাদি।
আদালতও বিষয়টি খতিয়ে দেখে সত্যতা জানতে পারে। এ ধরনের ডিজিটাল এভিডেন্স নিয়ে আদালতে সত্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারটা দেশেই প্রথম। সিসিটিভি ফুটেজ, সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রিপোর্ট ইত্যাদিও দারুণ ভাবে কাজে এসেছিল। ওরা কীভাবে ক্রাইম করেছিল, ফরেন্সিক ল্যাব রিপোর্ট থেকেও ধরা পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের প্রাসঙ্গিক জাজমেন্টের এক গুচ্ছ কপিও আমি আদালতে জমা দিয়েছিলাম। সব মিলিয়ে এ মামলা একটা ল্যান্ড মার্ক মামলা।’ এ দিন যে যে ধারায় ধৃতেরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেগুলো হলো – ৩০৭, ৩৯৫, ৩৯৭, ৩৫৩, ৩৪ আইপিসি, ২৫/২৭ অস্ত্র আইন।