Justice Abhijit Ganguly,জনগণের ‘মসিহা’ থেকে আইন জগতের ‘চক্ষুশূল’, তিনিই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় – justice abhijit ganguly involved in controversy for various cases at calcutta high court


অমিত চক্রবর্তী

শিক্ষা বিষয়ক মামলার মত অতি নিস্তরঙ্গ একটি বিষয় গত বছর তিনেক ধরে এ রাজ্যে ঝড় তুলে দিয়েছে। স্কুলে শিক্ষক এবং কর্মী নিয়োগ নিয়ে এই সরকারের আমলে প্রবল দুর্নীতি হয়েছে বলে জনমানসে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সৌজন্যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্যের শিক্ষিত বেকার থেকে যে কোন বিষয়ে বঞ্চিত বিচার না পাওয়া জনগণ বিচার পাওয়ার জন্য ছুটছেন হাইকোর্টে একটি মাত্র এজলাসে। মধ্যবিত্ত বাঙালির হেসেল থেকে রেস্তরাঁ, চায়ের আড্ডা থেকে মহিলাদের আলোচনায় তিনিই, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু নাম নয়, গত বছর দুয়েকে তিনি গরীবের মসিহা। বঞ্চিতের ত্রাতা। সর্বহারার ভগবান। নানান রূপে পরিচিতি পেয়েছেন। গ্রাম থেকে শহর রাস্তার ধারে ইটের বেদীতে তার ছবিতে ফুলের মালা দেওয়া হয়েছে। পুজোর প্যান্ডেলে তালি তৈরি হয়েছে তাঁর ছবি দিয়ে। কেউ বলেছেন, তিনি রবিনহুড। কারও কাছে তিনি বিচারব্যবস্থার সিংহম। হয়তো তিনিও নিজেকে বঞ্চিত মানুষের ‘পরিত্রাতা’ ভেবেছেন। ঘড়ির সময় বেঁধে তিনি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে সিবিআইয়ের অফিসে জেরার মুখোমুখি করিয়েছেন। এক ঘণ্টার নোটিশে রাজ্যের আইনমন্ত্রীকে তাঁর এজলাসে তলব করেছেন। আবার সিবিআইকেও এফআইআর লেখার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছেন। ফলে জনগণের চোখে তাঁর পরিচয় হয়েছে প্রায় ‘সর্বশক্তিমান’ হিসেবে।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে পোস্টার

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে পোস্টার

আবার ঠিক একই সময় তিনি আইনজীবী মহলের একাংশের কাছেও অনেকটা ‘নেতিবাচক’ তকমা পেয়েছেন সেই তিনিই। দুই বিচারপতির সংঘাতের খবর শিরোনামে এলেও, ‘সংঘাত পর্ব’ নতুন নয় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কর্মজীবনে। গত ২২ নভেম্বর ২০২১ সালের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির আঁচ পেয়ে প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হলে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ দেয় তাঁরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। সেই মামলায় একটি রিপোর্ট তলব করেছিল সিঙ্গেল বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় মুখ বন্ধ খামে জমা করা ওই রিপোর্ট এখনই খুলতে পারবেন না সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি। তারপরই বিচারপতি ট্যান্ডনের সম্পর্কে নানার অভিযোগ তুলে, তার হাত-পা বেঁধে দেওয়ার অভিযোগ এনে সিঙ্গেল বেঞ্চ প্রশাসনিক চিঠি লেখে দেশের শীর্ষ আদালতকে।

কিছুদিন পরে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হন বলে অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারি দেন। আবার তাঁর দেওয়া একাধিক নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করলে সেখানকার একের পর এক বিচারপতির নাম করে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেন খোলা এজলাসে। এমনকি অবসর নেওয়া সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি মানিক ভট্টাচার্যের করা একটি মামলায় স্থগিত দেওয়ার পেছনে ‘রহস্য’ খুঁজে বের করতে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যেও চিঠি লেখেন এজলাসে বসেই।

গত বছর একটি বাংলা টিভি চ্যানেলে তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকার নিয়েও মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর এই ইন্টারভিউ নিয়ে কিঞ্চিত সমালোচনা করে। আবার সন্ধ্যেবেলায় তিনি এজলাসে বসে নির্দেশ দেন, ওই দিন রাত বারোটার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ওই মামলার যাবতীয় নথি এবং ইন্টারভিউয়ের যে তর্জমা করা হয়েছে, সেই নথি তাঁকে পাঠাতে হবে। সেই রাতেই সুপ্রিম কোর্ট ফের বেঞ্চ বসিয়ে তাঁর ওই নির্দেশ খারিজ করে দেয়।

Justice Abhijit Ganguly : বিচারপতির গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফের সংঘাতে রাজ্য, নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন
সম্প্রতি একটি মামলায় মানিক ভট্টাচার্যের হয়ে সওয়াল করা এক আইনজীবীকে মোটা টাকা জরিমানাও করেন তিনি। শেষ না সেখানেই, অন্য একটি মামলায় এক আইনজীবীকে এজলাস থেকেই গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। এমনভাবেই প্রতিদিন মামলা বা মামলার বাইরের নানান বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে থেকে গিয়েছেন বিচারপতি। কখনও বাংলা ভাষায় শুনানি করতে বলা, আবার অসৎদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে দেওয়ার ডাক দিয়ে তিনি বরাবরই সংবাদমাধ্যমের খবরে থেকে গিয়েছেন। এবার বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন যে সুপ্রিমকোর্টকে ৫ বিচারপতির বেঞ্চ বসাতে হয়েছে তার ওই রায় নিয়ে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *