একশো বছরেরও প্রাচীন বর্ধমানের বীরহাটার এই কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য রয়েছে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দেবাশিস মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, মানুষের বিশ্বাসে তো আর আঘাত দেওয়া যায় না। তাই দু’জন ভক্ত এসে যখন মাকে স্মার্ট ঘড়ি আর অ্যান্ড্রয়েড ফোন দান করেন তখন তা নিতেই হয়। নিয়মিত চার্জও দেওয়া হয় তাতে। কিন্তু এই মোবাইল ফোনে লাভ কী?
কেউ কি আর কথা বলতে পারবেন দেবীর সঙ্গে? প্রধান পুরোহিত জানাচ্ছেন, বহু ভক্তই মোবাইল নম্বর পেতে ইচ্ছুক। মন্দির থেকে সেই নম্বর সংগ্রহ করতে হয়। তবে কেউ ওই নম্বরে ফোন করলে রিং বেজে যাবে। মন্দিরের কেউ ধরবেন না। তাহলে? প্রধান পুরোহিত বলেন, ‘কখনও পুজোর সময়েও ফোন বাজে। তার পর বন্ধও হয়ে যায়। আসলে যাঁরা ফোন করেন তাঁরা ভাবেন, অন্তত ফোন তো করতে পারলাম। নাই বা পারলাম কথা বলতে।’
শুধু স্মার্ট ওয়াচ বা মোবাইল নয়, অনেকে প্রসাধনী সামগ্রীও দেন বলে জানাচ্ছেন তিনি। যেমন শীতের সময়ে ক্রিম, তেল ইত্যাদি। বলেন, ‘আমরা মায়ের গায়ে ক্রিম লাগিয়ে দিই। অনেকে এসব নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও করেছেন। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে কিছু দিলে আমরা সেটা মায়ের কাছে রাখতে বাধ্য।’
কালীবাজারের বাসিন্দা সুভাষ সাহা বলেন, ‘মায়ের কাছে এসে অনেকেরই মনোস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। সেই কারণেই এত মানুষ আসেন। মায়ের হাতে ফোন বা ঘড়ি থাকায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। মা তো আমাদের পরিবারেরই এক জন।’
বর্ধমানের বিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মন্দির ট্রাস্টের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘আমি নিজেও দেখে এসেছি বীরহাটা মায়ের হাতে ফোন, ঘড়ি। এটা মানুষের বিশ্বাস। অনেকেই আমাদের মন্দিরে বিয়ের কার্ড, পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে পুজো দেন। সেটাও তাঁদের বিশ্বাস। আমাদের মন্দিরে বলি দেওয়া এখন বন্ধ। তার পর অনেকেই রুপোর ছাগ তৈরি করিয়ে আমাদের দিয়ে যান। ফোন বা ঘড়ি রাখার মতো কোনও প্রস্তাব এখনও আমাদের কাছে কেউ নিয়ে আসেননি। এলে আমরাও তখন ভেবে দেখব।’