Hooghly News,অভাবের সংসার, কোলে সন্তান! সব দায়িত্ব সামলেও মাঠ কাঁপাচ্ছেন হুগলির কবিতা – hooghly female footballer kabita soren struggling for success


সংসারে কান পাতলেই শোনা যায় অভাব অভাব আর অভাব। মাটির দেওয়াল ও টালির ছাউনি দেওয়া ঘরেই এক পুত্র সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে দিব্য সংসার সামলে ফুটবল পায়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন হুগলির জাঙ্গিপাড়া হিজুলি গ্রামের সাঁওতাল পরিবারের কন্যা কবিতা সরেন। ভালোবেসে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন নিরঞ্জন মুর্মুকে। তিনিও একজন ভাগচাষি। পরের জমি চাষ করে যেটুকু উপার্জন হয় তা থেকেই কোনও রকমে চলে তাঁদের সংসার। তবে স্ত্রীর খেলার প্রতি কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি স্বামী, বরং উৎসাহ জুগিয়েছেন। কবিতা ফুটবলের পাশাপাশি চাষের কাজে স্বামীকেও সাহায্য করেন। কখনও কোদাল হাতে আবার কখনও পিঠে স্প্রে মেশিন বেঁধে জমিতে যেতে হয় তাঁকে। মাঠ থেকে ফিরে ধরতে হয় সংসারের হাল। সংসারে রয়েছে, একটি পুত্র সন্তানও। দেখতে দেখতে আড়াই বছর বয়স হয়ে গিয়েছে পুত্র সানির। লড়াই সংগ্রামের উপাখ্যান জড়িয়ে কবিতা হয়ে উঠেছেন ‘সুপার মম’।

ফুটবলের প্রতি প্রথম থেকেই ভালোবাসা রয়েছে কবিতার। বিয়ের পরেও সেই ভালোবাসায় ছেদ পড়েনি। তবে তার জন্য তাঁকে অনেক গুঞ্জনা শুনতে হয়েছে প্রতিবেশী ও শ্বশুর বাড়ির কাছে। তবে তাঁর জেদের কাছে হার মেনেছে সবকিছুই। ফুটবলকে বহন করে জীবনের রাজপথে দৌড়ে চলেছেন এই উদীয়মান ফুটবলার। ছোটবেলায় আর্থিক পরিস্থিতি ভালো না হওয়ার সেভাবে কোচিংয়ের সুযোগ পাননি। তবে হাল ছাড়েননি। নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে উঁচু-নিচু বন্ধুর পথকেও মসৃণ করেছেন। বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে হরিপাল স্টেশন থেকে কলকাতায় পৌঁছাতে হয় প্র্যাকটিস করতে। বর্তমানে শ্রীভূমি এফসি-র সুজাতা করের কাছে অনুশীলন করছেন তিনি। পরপর দু’বছর কন্যাশ্রী কাপে চ্যাম্পিয়ন করেছেন নিজের টিমকে। কলকাতার একাধিক ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। এছাড়া দু’টি ন্যাশনাল ও দু’টি ইউনিভার্সিটি ফুটবল টিমেও খেলেছেন। ২০২৩ সালে মহিলা ফুটবলার কন্যাশ্রী কাপে শ্রীভূমির হয়ে আটটি গোল করেন তনি। আগামীতে তাঁর ইচ্ছা ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে জায়গা করে নেওয়ার।

কবিতা বলেন, ‘অভাবের সংসারে খেলে যতটুকুই উপার্জন হয় তা দিয়েই সংসার চালে। স্বামী একজন ভাগচাষি। অর্থের অভাবে বড় কোনও জায়গায় খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। কোনও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে ভালো হয়। আগামী দিনে জাতীয় মহিলা ইন্ডিয়া টিমের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলতে চাই। তার জন্য আমাকে আরও বেশি করে পরিশ্রম করতে হবে। দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে প্র্যাকটিস করতে যাওয়া সম্ভব হয় না। যদি কলকাতায় থেকে প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ভালো হয়। তার জন্য কেউ যদি সাহায্য করেন তাহলে আগামী দিনে অনেক দূর এগোতে পারবো।’

কবিতার স্বামী নিরঞ্জন বলেন, ‘বিয়ের পর অনেকেই খেলতে দেয় না, কিন্তু স্ত্রী আমাকে জানিয়েছিল সে অনেক বড় জায়গায় খেলতে চায়। আমি তাকে কখনও বাধা দিইনি, বরং তাকে উৎসাহিত করেছি। বিয়ের পরেও অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অন্যের কথায় কান না দিয়ে স্ত্রীকে খেলায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। তবে সে নিজেও কঠোর পরিশ্রম করেছে। তাই সরকারের কাছে আবেদন, কোনও চাকরি পেলে তবে তার পরিশ্রম সার্থক হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *