Medical College Admission Case : রায় যা-ই হোক, মেধার জোরে স্বপ্ন ছুঁতে চান ইতিশা – medical college admission case student itisha soren and her family are looking at the supreme court order


অমিত চক্রবর্তী

মেডিক্যালে সংরক্ষিত আসনে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর মেয়ের দায়ের করা একটি সাদামাঠা মামলা যে গোটা দেশের বিচারব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেবে, তা এখনও ভেবে উঠতে পারছেন না সুনীল সোরেন।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ইতিশা সোরেন চেয়েছিলেন তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী সংরক্ষিত তালিকায় কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পেতে। তাঁর সেই মামলার সূত্র ধরেই মেডিক্যালে ভর্তিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে হাইকোর্টে। আর সেই দুর্নীতির রহস্যভেদে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া এবং ডিভিশন বেঞ্চের তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া নিয়েই সামনে এসেছে দুই বিচারপতির নজিরবিহীন দ্বন্দ্ব।

সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চকে। হাইকোর্টে মূল মামলাকারী ইতিশা সোরেনকেও এই মামলায় পক্ষ হওয়ার কথা বলেছে সিজেআই-এর বেঞ্চ। সেখানে তিনি পক্ষ হবেন কি না, সেটা রবিবার পর্যন্ত না-ভাঙলেও যে ভাবে একটি মামলার জেরে সামগ্রিক ভাবে জুডিশিয়াল সিস্টেম বা জুডিশিয়াল ডেকোরামের মধ্যেই বিচারব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্রব নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে, তা ভেবে কিছুটা দিশেহারা ইতিশার পরিবার।

আইনজ্ঞদের পরামর্শে এ সব নিয়ে মিডিয়ায় মুখ খুলতে চান না ইতিশা। তবে তাঁর বাবা সুনীল সোরেন স্পষ্ট জানালেন, এই নজিরবিহীন মামলার গতিপ্রকৃতি যা-ই হোক না কেন, তাঁর মেয়ে কিন্তু চান আবার মেডিক্যালে ভর্তির পরীক্ষায় বসে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ে ভালো ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছুঁতে।

সুনীলবাবু এ দিন জানান, ২০২২ ও ২০২৩— পরপর দু’বছরই মেডিক্যালের নিট পরীক্ষায় বসেছিলেন ইতিশা। তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ নম্বর পেলেই কোয়ালিফাই করার কথা। বাবার কথায়, ‘মেয়ে দু’বারই ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিল। কিন্তু কোনওবারই সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ আসেনি। গতবার কাউন্সেলিংয়ের পর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।

কিন্তু সেখানে প্রতি বছর পড়ানোর যা খরচ, আমাদের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে তা চালানো দুষ্কর।’ সুনীলবাবুর সংযোজন, ‘আমার বড় মেয়ে এম-টেক পাস করে চাকরির চেষ্টা করছে। ছোট মেয়ে ইতিশা বরাবরই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পরেও শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ্য না-থাকায় ওকে ডাক্তারিতে ভর্তি করতে পারিনি। বাবা হিসেবে আমি নিজেও হতাশ। মেয়েও একেবারে ভেঙে পড়েছিল। এই অবস্থায় অনেকের সঙ্গে কথা বলার পর মামলা করার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু তার যে এমন মারাত্মক ফল হবে, সেটা বুঝতে পারিনি।’

সুনীলবাবুরা আদতে পুরুলিয়ার আদি বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে বহু দিন ধরে দুর্গাপুরে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবার হওয়া সত্ত্বেও বড় মেয়েকে কিছুটা এগিয়ে দিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ছোট মেয়েও তার ইচ্ছে অনুযায়ী ডাক্তার হোক। কিন্তু সেই ডাক্তারি পড়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেও কী ফল হবে, সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে না।’

সুনীলবাবু বলেন, ‘ইতিশা আমাকে জানিয়েছে, আদালতে কী হবে, না হবে— সেটা নিয়ে ভাবছে না। এ বছর আবার নিট পরীক্ষায় বসতে চায়। কারণ আদালত যদি সুযোগ না দেয়, সে ক্ষেত্রে নিজের মেধার জোরেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করে ও ডাক্তার হতে চায়।’

Justice Abhijit Ganguly : মেডিক্যাল কলেজ দুর্নীতিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে করা FIR খারিজ ডিভিশন বেঞ্চের
একটা মামলায় দুই বিচারপতির সংঘাতের জেরে যে ভাবে গোটা দেশের বিচারব্যবস্থায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে, তাতে মামলাকারী হিসেবে খানিকটা চিন্তাতেই রয়েছে ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারটি। মেয়েকে বাইরের লোকের যোগাযোগ থেকে আপাতত কিছু দিন দূরে রাখার চেষ্টা করছে গোটা পরিবার। সুনীলবাবুর কথায়, ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে তো আটকাতে পারছি না। তবু চেষ্টা করছি, যতটা সম্ভব বিষয়টা থেকে মেয়েকে দূরে রাখতে। মেয়ে মানসিক ভাবে বিমর্ষ হয়ে রয়েছে। একটা মামলা করে তা নিয়ে গোটা দেশের মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’

এত কিছুর পরেও ফোকাস সরতে দিতে রাজি নন ইতিশা বা তাঁর পরিবার। তাঁর বাবার কথায়, ‘গোটা ঘটনাপ্রবাহে মনে হচ্ছে, আমার মেয়ের সমস্যার থেকেও এটা অনেক বড় সামাজিক ও আইনি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরাও চাই, আদালতে যা হওয়ার হোক। মেয়ে আবার পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ করে নিক।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *