তবে সে সময় অফিস বন্ধ থাকায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু অফিস চলাকালীন ঘটনাটি ঘটলে কী হতো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একইসঙ্গে বর্ধমান স্টেশনে নজরদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অফিসের তালা খুলে আরএমএসের ইনস্পেক্টর পৌলমী বসু দেখতে পান, সিলিং থেকে উপড়ে পড়া সিমেন্টের চাঁইয়ের ভাঙা টুকরো পুরো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কম্পিউটার, প্রিন্টার, তাঁর চেয়ার-টেবিলের উপরেও পড়ে রয়েছে সিমেন্টের টুকরোগুলি।
তাঁর বক্তব্য, ‘আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না, এটা অফিস চলার সময়ে হলে কী হতো! কেউ প্রাণে মারাও যেতে পারতেন। অফিসে এসবের মধ্যে আজ কোনও কাজই করতে পারলাম না আমরা। নিজের অফিসে বসতে না পেরে সারাদিন উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেরালাম।’ এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘আপাতত দ্রুততার সঙ্গে ওই ঘরের সিলিংয়ে ভাঙা অংশ মেরামতের ব্যবস্থা করছি।’
বর্ধমান স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পে বিমানবন্দরের ধাঁচে গড়ে তুলতে চায় রেল। কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে এই স্টেশনে। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি বর্ধমান স্টেশন ভবনের সামনের কাঠামো ভেঙে মারা গিয়েছিলেন একজন। সে ঘটনায় তদন্ত কমিটি তৈরি করে রেল। আজও সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সামনে আসেনি বলে অভিযোগ।
গত ডিসেম্বর মাসে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে ৪ জনের মৃত্যু, ৩৭ জনের আহত হওয়ার ঘটনার পরেও তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। তার রিপোর্ট আজও অজানা। এদিনের ঘটনার পরে আরএমএস ইনস্পেক্টর পৌলমী বসু বলেন, ‘এর আগেই প্লাস্টারের অংশ একটু ভেঙে পড়েছিল। যাঁরা এই কাজ করেন তাঁরা কেউই চিপিং করে কাজটা করেন না। ঠিকাদার যেমন খুশি কাজ করে যায়, কেউ দেখার নেই। সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ারকে (সিভিল) আমরা বারবার অফিস থেকে চিঠি দিয়েছি। তার পরেও কোনও কাজ হয়নি। মৌখিক ভাবে আমাদের জানানো হয়েছিল, বিল্ডিংটা পুরোনো হয়ে গিয়েছে। এটা ভেঙে নতুন বিল্ডিং তৈরি করা হবে।’
যদিও এ নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রর বক্তব্য, ‘এই ঘরের উপরে থাকা অব্যবহৃত রুমগুলি খালি করে দেওয়া হবে। যাতে পুরোনো বিল্ডিংয়ের চাপ না পড়ে। এখনই এই বিল্ডিং ভাঙার কোনও পরিকল্পনা নেই রেলের।’
অন্য দিকে, এই ঘটনায় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের অভিযোগ, ‘রেলের ন্যূনতম নজরদারি থাকলে এমন ঘটনা ঘটত না। রেল মন্ত্রকের ধারাবাহিক মিথ্যা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ফসল হচ্ছে এগুলি। জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার স্মৃতি এখনও মানুষের মনে টাটকা। তারইমধ্যে এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিল, যাত্রী ও কর্মীদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ রেল।’
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় যে কেন্দ্রের সরকার জনস্বার্থের সমস্ত ইস্যু উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের জীবনকে বাজি রেখে ধর্মের নামে দেশ চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সাধারণ দাবিদাওয়া এদের কাছে গুরুত্বহীন।’
বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, ‘পুরোনো ভবনের সংস্কারে খামতি থাকতে পারে। তবে নতুন বিল্ডিং তৈরি হবে। আরও আধুনিক হবে স্টেশন। এতদিন যে সরকার কেন্দ্রে ছিল, তারা কোনওদিকেই নজর না-দেওয়ায় এত বেশি পরিমাণে ড্যামেজ হচ্ছে স্টেশনগুলিতে। তবে বিজেপি সরকার নতুন ভাবে স্টেশনদগুলি সাজিয়ে তুলবে, নিশ্চিত থাকুন।’