তা মাথায় রেখেই এবার ধনেশ পাখির পাঁচটি প্রজাতির সংখ্যা আরও বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য বন দপ্তর। তিন দিনের সপ্তম বক্সা পাখি উৎসবে অংশ নিয়ে বন দপ্তরের ওই অভিনব সিদ্ধান্তের কথা জানান রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায়।
বন দপ্তরের পর্যবেক্ষণ, বক্সার বাঘবনে ধনেশ পাখিদের বাসা তৈরির জন্য উঁচু ময়না, বয়রা, লালি ও শাল গাছের সংখ্যা হর্নবিলদের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ধনেশ পাখিরা বংশবৃদ্ধির জন্যে মাটি থেকে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৬০ ফুট উচ্চতায় গাছের কোটরে বাসা বানাতে পছন্দ করে। যাতে অন্যান্য প্রাকৃতিক শিকারিদের হাত থেকে নিজেদের ডিমকে সুরক্ষিত রাখতে পারে তারা।
এ ধরনের গাছের সংখ্যা কমে আসায়, এখন হর্নবিলরা খানিকটা সঙ্কটে বলে মনে করছে বন দপ্তর। স্বাভাবিক ভাবেই, বিকল্প ভাবনা হিসেবে অরুণাচলপ্রদেশের উদাহরণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আসলে উদীয়মান সূর্যের রাজ্য অরুণাচলপ্রদেশে হর্নবিল সংরক্ষণে কৃত্রিম বাসা তৈরি করে যুগান্তকারী সাফল্য মিলেছে। সেটাই এই রাজ্যেও প্রয়োগ করতে চায় বন দপ্তর।
ঠিক কেমন হবে মানুষের তৈরি ধনেশ পাখিদের বাসা?
এর আকৃতি হবে হেক্টাগনাল বা ষড়ভূজ। জল নিরোধক প্লাইবোর্ড দিয়ে তৈরি করা হবে এই বাসা। আর তা জুড়তে মোটেও ঝাঁঝালো গ্লু ব্যবহার করা যাবে না। বরং ব্যবহার করা হবে স্টিলের স্ক্রু। বাসা তৈরি হয়ে গেলে কপিকল ও মোটা দড়ির সাহায্যে ঝোলানো হবে ধনেশ পাখিদের পছন্দের উঁচু গাছে।
প্রাকৃতিক ভাবে গাছের কোটরে তাদের বাসাকে ‘হেক্টাগনাল’ আকৃতি দেয় হর্নবিলের জোড়া। সেই নিয়ম মেনেই কৃত্রিম বাসাও হবে ষড়ভূজ আকারের। ওজন হবে কমপক্ষে ত্রিশ কিলো। প্রাথমিক ভাবে ষড়ভূজাকৃতি ওই বাসা গড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা অনির্বাণ ঘোষ। তিনি সরকারি কর্মচারীর পাশাপাশি একজন পাখিপ্রেমীও।
বক্সা পাখি উৎসবে উপস্থিত রাজ্যের শীর্ষ বনকর্তাদের সামনে নিজের তৈরি হর্নবিলের বাসা এনে দেখান তিনি। তাঁর প্রাথমিক কাজ দেখে খুশি হয়েছেন বনকর্তারা। ‘নেচার মেট নেচার ক্লাব’ যাঁরা হর্নবিল নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদেরও পছন্দ হয়েছে অনির্বাণের তৈরি পাখির কৃত্রিম বাসা। তবে এই বাসাগুলির আয়ু এক মরসুমের বেশি হবে না বলে জানানো হয়েছে।
পাখি গবেষক ঋষিণ বসুরায় বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে হর্নবিলের ৫ রকম প্রজাতি দেখা যায়। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পেও তারা রয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হচ্ছে হর্নবিলের বাসা তৈরির জন্য বড় গাছের অভাব রয়েছে এখানে। আবার বড় গাছ থাকলেই সেখানে অনেক সময় বড় কোটর থাকে না। এই মুহূর্তে বক্সা এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গেই হর্নবিলের সংখ্যা বেশি না কম, আমরা জানি না। তবে তাদের বাসার প্রয়োজন রয়েছে এটুকু আমরা বুঝতে পারছি।’
রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অরুণাচলে কৃত্রিম বাসা সফল হয়েছে। ধনেশ বড় পাখি। উঁচু গাছ, বড় কোটর প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের বাসা তৈরির বিষয়টি কিছুটা সীমিত হয়ে আসে। আমরা গত বছর থেকেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলাম। ট্রায়াল অ্যান্ড এরর প্রক্রিয়াতে কাজটি চলবে। আশাবাদী পরিকল্পনা সফল হবে।’
অনির্বাণ বলেন, ‘পাখিদের সঙ্গে বরাবর সখ্য রয়েছে আমার। যখন হর্নবিলদের বাসার সঙ্কটের কথা জানলাম, তারপর থেকেই খুঁটিনাটি বুঝে নেওয়ার জন্য ইন্টারনেট ও ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে ওদের বাসা তৈরির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করি।’