কেননা, এ বিষয়ে কোনও পড়ুয়া মুখ না খোলায় এবং তার জেরে মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত না হওয়ায় একধার থেকে সব পড়ুয়া, এমনকী ইন্টার্নদের উপরেও নেমে এসেছে শাস্তির খাঁড়া। কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ না করাই পড়ুয়াদের অপরাধ। তাই প্রথম বর্ষ থেকে একেবারে ইন্টার্ন পর্যন্ত সব ছাত্রছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মেনেই এই শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, অতীতেও কাছাকাছি দৃষ্টান্ত রয়েছে এই শহরেই।
ইউজিসি-র এই নিয়মের যুক্তি দিয়েই গত অগস্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক র্যাগিংয়ের জেরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় মেন হস্টেলের একটি ব্লকের সব আবাসিককে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করেছিল অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটি। যদিও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এনআইএইচ কঠোর ভাবে বাস্তবায়িত করেছে এই বিধি। যার কোপে পড়ে সাসপেন্ড হওয়া থেকে আর্থিক জরিমানা, সবই রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত নতুন বছরের গোড়ায়। বিএইচএমএস কোর্সের প্রথম বর্ষের কয়েকজন ছাত্র নাম-পরিচয় গোপন রেখে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইউজিসি-র অনলাইন হেল্পলাইন পোর্টালে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন। নির্দিষ্ট কোনও অভিযুক্তের নাম উল্লেখ না করে শুধু বলা হয়, দ্বিতীয় বর্ষের কিছু ছাত্র এই র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সঙ্গে সঙ্গে এনআইএইচ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানায় ইউজিসি।
সেইমতো এনআইএইচ কর্তৃপক্ষ গত ৮ জানুয়ারি অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটির বৈঠক ডাকে। সেখানে র্যাগিংয়ের শিকার প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। গড়া হয় অ্যান্টি-র্যাগিং তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির সামনে পড়ুয়ারা মুখ খোলেনি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, শাস্তি দেওয়া হবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের। বাদ রাখা হবে ছাত্রীদের।
কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারির বৈঠকে বেশ কিছু শিক্ষকের আপত্তি সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ প্রথম বর্ষ বাদে সব বর্ষের ছাত্রছাত্রী এবং ইন্টার্নদের শাস্তির বিধান দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই এতে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে পড়ুয়াদের মধ্যে, বিশেষত ছাত্রী মহলের একটা বড় অংশে। অনেকেরই বক্তব্য, র্যাগিংয়ের ব্যাপারে জড়িত না থেকেও যে ভাবে শাস্তির কোপে পড়লেন তাঁরা, তা দুর্ভাগ্যজনক। শাস্তি পাওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছেন ১৭ জন ছাত্র ও ৪৬ জন ছাত্রী-সহ মোট ৬৩ জন বিদেশি পড়ুয়াও।
শুধুমাত্র প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের এবং তাঁদের অভিভাবকদের র্যাগিংয়ের ঘটনা চেপে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের সেই চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি দু’ সপ্তাহ সাসপেন্ড করা হয়েছে অ্যাকাডেমিক কার্যকলাপ থেকে। অর্থাৎ, কোনও ক্লাস তাঁরা করতে পারবেন না।
ওই সময়ে হস্টেল ছেড়ে থাকতে হবে সকলকে (বিদেশি বাদে)। সঙ্গে অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের প্রত্যেককে ১০০০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। চতুর্থ বর্ষের যেহেতু ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ফাইনাল পরীক্ষা এবং তাঁদের এখন কোনও ক্লাস নেই, তাই তাঁদের শুধুমাত্র ১০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর ‘সিনিয়র-মোস্ট’ হিসেবে ইন্টার্নদের জরিমানা ধার্য হয়েছে ২০০০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে এনআইএইচ-এর অধিকর্তা সুভাষ সিং বলেন, ‘যা হয়েছে, সবই ইউজিসি-র নিয়ম মেনে। অভিযুক্ত চিহ্নিত না হলে কালেক্টিভ পানিশমেন্টের সংস্থান রয়েছে ইউজিসি-র অ্যান্টি-র্যাগিং সেলের বিধিতে।’ শিক্ষা মহলের একাংশও জানাচ্ছেন, আজকাল কোর্সে ভর্তির সময়েই পড়ুয়া ও তাঁর অভিভাবককে একটি ডিক্লেয়ারেশন দিতে হয়।
যেখানে অঙ্গীকার করতে হয় যে, র্যাগিংয়ের কোনও ঘটনা কানে এলে অবিলম্বে তা কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে হবে। তা না করলে সেটাকে একপ্রকার অপরাধের চোখেই দেখে ইউজিসি। এবং সেইমতো কালেক্টিভ পানিশমেন্ট দেওয়ার কথাও বলা রয়েছে বিধিতে। তবে এমন নজির বেশ বিরল।