স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানের কথায়, ‘শব্দটা কোথা থেকে এল সেটাই এখন রহস্য!’ সমুদ্রবিজ্ঞানী তুহিন ঘোষের মতে, ‘উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রপৃষ্ঠে অনেক সময় সেডিমেন্ট (পলি) জমে জমে পাহাড়ের মতো স্তূপ হয়ে থাকে। আচমকা ওই সব সেডিমেন্টের স্তূপের মধ্যে সংঘর্ষ হলে প্রবল কম্পন হয়। বিকট শব্দ হয়। জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে।’
এ দিন অমন বিকট শব্দের পর তট থেকে পর্যটকরা তড়িঘড়ি হোটেলে ফিরে আসেন। হাওড়ার বাসিন্দা সুমিত দেবনাথ বলেন, ‘পাহাড় থেকে পাথর ভেঙে পড়ার সময় যে শব্দ হয়, ঠিক তেমনই বিকট শব্দ শুনেছি আজ। প্রথমে হালকা, পরে গর্জনের মতো ভারী আওয়াজ। তার অল্প পরেই যেন কেঁপে উঠল পায়ের তলার মাটি।’ এই কম্পন খুব বেশি হলে এক মিনিট স্থায়ী হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গোটা বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজনও অবাক হয়ে যান। জোর গুঞ্জন শুরু হয় সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার মানুষজনের মধ্যে। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের দাবি, শুধু বকখালি বা ফ্রেজারগঞ্জ নয়, বিকট শব্দ শোনা গিয়েছে ৫-৭ কিলোমিটার দূরের এলাকাতেও। তবে সেখানে কোনও কম্পন অনুভূত হয়নি। ফ্রেজারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাশীনাথ জানা বলেন, ‘আচমকা কিছু ভেঙে পড়ার বিকট শব্দ কানে আসে। তারপর ভূমিকম্পের মতো কম্পন অনুভূত হতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল সকলে। সবাই ভেবেছিল ভূমিকম্পই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে বিকট শব্দ করে কেঁপে উঠেছিল নদী ও বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত মৌসুনি দ্বীপের একাংশও। একই রকম আতঙ্ক গ্রাস করেছিল দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে। তারপর আবার বকখালিতে একই রকম ঘটনায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
সমুদ্র বিজ্ঞানী তুহিন ঘোষ বলেন, ‘উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রপৃষ্ঠে অনেক সময় সেডিমেন্ট (পলি) জমে জমে পাহাড়ের মত স্তূপ হয়ে থাকে। আচমকা ওই সব সেডিমেন্টের স্তূপের মধ্যে সংঘর্ষ হলে কম্পন হয়। বিকট শব্দও হয়। যদি সেটা উপকূলের কাছাকাছি হয়, তা হলে ঢেউ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি সমুদ্রের গভীরে হয়, তা হলে ঢেউয়ের সম্ভাবনা কিছুটা কমে যায়। বিকট শব্দ এবং কম্পনের এটাই একমাত্র সম্ভাবনা।’
তবে আর একটি সূত্র বলছে, যুদ্ধবিমান যখন আকাশে সাবসনিক থেকে সুপারসনিকে শিফট করে তখন সেই বিকট শব্দের জেরে মাটিতে কম্পন অনুভব হতে পারে। এটাকে বলা হয় সনিক বম্ব। তেমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ।