Book Stall: শ্রীরামপুর স্টেশনের ঐতিহ্য জৈন বুক স্টল ৫৩-তেই ‘আউট’ – serampore station 50 years old jain book stall shut down due to pressure from railway tender


সোমনাথ মণ্ডল

বয়স ৫০ পেরিয়েছে। শ্রীরামপুর স্টেশনের জৈন বুক স্টলের পরিচয় অবশ্য সেটা নয়। পাঠক এবং ক্রেতাদের কাছে ওই বুক স্টল মানে আবেগ। কারণ, ইন্টারনেটের যুগের আগে চাকরির খোঁজ মিলত সেখান থেকেই। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশের নামকরা লেখকদের বই পেতে ভরসা ছিল ওই বুক স্টল। পয়সা না থাকলেও, দোকানে দাঁড়িয়ে গোগ্রাসে বই পড়েছেন পাঠকরা। এখন তাঁরা কেউ নামী সাহিত্যিক, কেউ চাকরি করেন। প্রতিদান হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি পেরোনো বুক স্টলের ‘অপমৃত্যু’ রুখতে চাইছেন তাঁরা!

সরকারি কাগজের গুঁতোয় সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই বুক স্টল। রেল জানিয়েছে, টেন্ডারের মাধ্যমে মাল্টিপারপাস স্টল করতে হবে স্টেশনে। কর্পোরেটের সঙ্গে লড়াই করে টেন্ডারে আদৌ ছাড়পত্র মিলবে কি না, জানা নেই। পেলেও ভাড়াও গুণতে হবে অনেকটাই বেশি।

জৈন বুক স্টল শ্রীরামপুর স্টেশনের এক এবং দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে। ১৯৭১-এ অশোক জৈন ওই স্টল চালু করেন। এখন দোকানের মালিক তাঁর ছেলে অভিষেক। রেলের নোটিসে আপাতত বুক স্টলটি বন্ধ। শ্রীরামপুরের সব স্তরের মানুষ এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বুক স্টল বাঁচাতে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু হয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ‘বই পড়ার অভ্যেসকে বাঁচাতেই এই লড়াই।’

তবে রেলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে অভিষেক চাইছেন, দোকানটা যে ভাবে হোক বেঁচে থাকুক। তাঁর কথায়, ‘মাল্টিপারপাস স্টল হলে রেলের ভাড়া অনেক বেশি হবে হবে। শুধু বুক স্টল হলে ভাড়া কম হতো।’

অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের একজন রূপালি বসাকের কথায়, ‘টাকা না থাকলেও প্রত্যেককে এমপ্লয়মেন্ট নিউজ় পেপার পড়তে দিতেন ওই দোকানদার। এটা ক’জন করতে পারেন?’ মায়ের কাছ থেকে ওই স্টলের গল্প শুনেছেন তনুজা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আমার মা এই স্টল থেকে চাকরির কাগজ ও বই কিনতেন। সেখানকার বই পড়ে আমরা দুই ভাইবোন সরকারি চাকরিও পেয়েছি।’

ষাটের দোরগোড়ায় পৌঁছেছেন শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, সাহিত্যিক রামকিশোর ভট্টাচার্য। যৌবনে তাঁর বইয়ের নেশা ওই স্টল থেকেই। তিনি বলেন, ‘ওই দোকানটি একটি ঐতিহ্য। যাঁরা লেখালিখি করতেন, তাঁরা ওখান থেকে অনেক বইয়ের সাহায্য পেয়েছেন। এখন সরকারি নিয়মে ওই স্টল বন্ধ হবে কেন?’

তবে রেলেরও যুক্তি রয়েছে এ বিষয়ে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের কথায়, ‘চুক্তির ভিত্তিতে স্টেশনে দোকানগুলো ব্যবসা করে। যে কোনও চুক্তিরই মেয়াদ রয়েছে। সেই মেয়াদের নবীকরণও হয়। তার পরেও নবীকরণেরও মেয়াদ থাকে। নতুন করে তা করা যায় না। এ ক্ষেত্রেও তেমন হয়ে থাকতে পারে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *