দেদার মদ গেলার পরে বেহুঁশ হয়ে পড়েন ওই বিট অফিসার এবং বনশ্রমিক। সেই সুযোগে ব্যারাক ছেড়ে বেরিয়ে রাতের অন্ধকারে হাওয়া হয়ে যায় সেই বন্দি। রাতভর কেউই জানতেন না ঘটনাটা। সকালে বনকর্মীদের হুঁশ ফিরলে টনক নড়ে। খোঁজ শুরু হয়। বন্দি পালানোর সাত-ঘণ্টা পরে খোঁজে নামলে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। এখনও কোনও হদিশ মেলেনি ওয়াসিম খানের।
কর্তব্যে এমন গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে বন দপ্তরের আধিকারিকেরা ওই বিট অফিসার ভবেশ ছেত্রীকে সাসপেন্ড করেছেন বলে জানা গিয়েছে। বন শ্রমিক যেহেতু দিন হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করতেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে আপাতত চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বাগডোগরা থানাতেও ঘটনাটি জানানো হয়েছে। তবে বন দপ্তরের আধিকারিকেরা এই ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করেননি।
রবিবার সকালেই কিন্তু ঘোষপুকুর-ফুলবাড়ি ফোর লেনের সড়কে বন দপ্তরের চেকপোস্টে ওই বন্দিকে পাকড়াও করেছিলেন বন দপ্তরের কর্মীরা। বিশাল কন্টেনারে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার বার্মা টিক অসম থেকে কলকাতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আগাম খবর থাকায় রাতভর চেক পোস্টে বসে নজরদারি করেন বনকর্মীরা। সকালে বমাল গ্রেপ্তার করা হয় ট্রাকচালককে।
বন দপ্তরের হাতে ধরা পড়া ব্যক্তিদের সাধারণত নিজেরাই আদালতে পেশ করেন বনকর্তারা। সেই কারণে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দি না-হলে থানার লকআপে পাঠানো হয় না। ওয়াসিম খানের ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা হয়েছিল। নিজেদের লকআপ না-থাকায় ব্যারাকে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা হয়। ঠিক ছিল, সকালেই বন্দিকে সমস্ত নথি সমেত আদালতে পাঠানো হবে। পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই বিট অফিসারকে। রাতে পালানোর সময়ে ওয়াসিম খান বন দপ্তরের বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত নথিও সঙ্গে নেন।
কার্শিয়াং বন দপ্তরের ডিএফও হরিকৃষ্ণ পি জে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। রাতে কার পরামর্শে আসর বসানো হয়েছিল, তার খোঁজ শুরু হয়েছে। বনকর্তাদের সবচেয়ে বড় আফশোস, ওই বন্দির কাছ থেকে পাচারের মাথাদের হদিশ পাওয়া যেত। লকডাউনের পরে কয়েকটি দফায় শিলিগুড়িতে কয়েক কোটি টাকার বার্মা টিক ধরা পড়েছে। কিন্তু মূল পাচারকারীর এখনও হদিশ মেলেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে ফেরার পথে ট্রাক চালকেরা বার্মা টিক নিয়ে কলকাতায় ফিরে যান। ওয়াসিম খানকে জেরা করে এই র্যাকেটের হদিশ করতে চেয়েছিল কার্শিয়াং বন দপ্তর।