আগামী দু’বছরের মধ্যে আইটি পার্ক তৈরি হয়ে যাবে। একবার পার্কটি চালু হয়ে গেলে কার্শিয়াং মহকুমায় কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আত্মবিশ্বাসী জিটিএ চিফ। তিনি বলেন, ‘আইটি পার্কের শিলান্যাস কার্শিয়াংয়ের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। আমরা প্রায় এক দশক ধরে কার্শিয়াংয়ে একটি কর্মসংস্থান নির্ভর শিল্প চাইছি। অবশেষে কাজ শুরু হলো। আমূল বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কার্শিয়াংয়ের।’
কার্শিয়াং পলিটেকনিক কলেজের পাশেই এই আইটি পার্কটি তৈরি হবে। পার্কটি তৈরি থেকে শুরু করে পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে ওয়েবেল। রাজ্যে ৩৩টি আইটি সেন্টার চালায় ওয়েবেল। তার মধ্যে তিনটি শিলিগুড়িতে। প্রায় পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ের এখানে কর্মসংস্থান হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের ছেলেমেয়েই এখানে চাকরি করেন। স্রেফ এই আইটি পার্কটিকে ঘিরেই মাটিগাড়া ক্রমশ শহুরে চেহারা নিচ্ছে।
ওয়েবেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্বরূপ ব্রহ্ম বলেন, ‘কার্শিয়াংয়ে আইটি শিল্পের সম্ভাবনা কেমন, তার একটি উদাহরণ দিলেই হবে। শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায় আমাদের তিনটি সেন্টারেই এখন নতুন কোনও উদ্যোগীকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না, তাঁদের জন্য কার্শিয়াং একটা নতুন অপশন হিসাবে উঠে আসবে। কার্শিয়াংয়েও প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’
দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াং নিয়ে প্রচলিত ধারণা হলো, এখানে শিক্ষা এবং পর্যটনই মূল পেশা। পাহাড়ে ইংরেজি মাধ্যমের বেশ কিছু স্কুল রয়েছে। সেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের ছেলেমেয়েরা একটা সময়ে পড়তে আসত। স্কুলগুলিকে কেন্দ্র করে সহায়ক জীবিকা তৈরি হয়েছিল। এখন কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের তেমন ভিড় নেই পাহাড়ে। বরং পাহাড়ের বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ শিলিগুড়িতে ক্যাম্পাস খুলে বসেছেন। একই ভাবে দার্জিলিংয়ে যেমন পর্যটনের বিকাশ হয়েছে, তার ছিটেফোঁটা হয়নি কার্শিয়াংয়ে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে পর্যটকেরা কার্শিয়াংয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়েই গন্তব্যে চলে যান।
একই পরিস্থিতি কালিম্পংয়ের। হোম স্টে-র জোরে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে পর্যটনের কিছুটা বিকাশ হলেও শহর এলাকায় বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। বেকারত্বের জেরেই নতুন প্রজন্ম কাজের খোঁজে বাইরে চলে যান। আইটি পার্ক তৈরি হলে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ডাউহিলের বাসিন্দা মনোজ রাই বলেন, ‘এখানে আমার ছেলে কোনও চাকরি না-পেয়ে বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছে। কার্শিয়াংয়ে আইটি পার্ক চালু হলে ছেলেকে পাহাড়ে ফেরানোর চেষ্টা করব।’ জিটিএ চিফ অবশ্য কার্শিয়াংয়ে আইটি পার্ক তৈরি করেই থেমে থাকতে চান না। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্য সরকারের সহায়তায় দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়েও আইটি পার্ক তৈরি করতে চাই। দু’টি শহরেই জমির খোঁজ চলছে।’