‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’— বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসে নবকুমারের উদ্দেশে এমন উক্তি করেছিলেন কপালকুণ্ডলা। বর্তমানে কলকাতায় প্রতিবছর গড়ে যে পরিমাণ মিটিং-মিছিল হচ্ছে, তাতে অতিষ্ঠ নিত্যযাত্রীরা ওই উক্তিটি ধার নিয়ে বলতেই পারেন, ‘রাস্তা তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’
কলকাতায় বর্তমানে রাস্তা রয়েছে কমবেশি ৪ হাজার ১৮ কিলোমিটার। ফুটপাত দখলের কারণে, কোথাও কোথাও রাস্তার উপর দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। ইএম বাইপাস সংযুক্তকারী মা ফ্লাইওভার বাদ দিলে, সময় বাঁচানোর মতো নতুন করে আর উড়ালপুলও তৈরি হয়নি গত কয়েক বছরে।
ফলে রাস্তার পরিধি খাতায় কলমে বাড়েনি। তার উপরে প্রতি বছর সপ্তাহের কাজের দিনে মিছিল-বিক্ষোভ-সমাবেশ মিলিয়ে কমবেশি ৬০০ কর্মসূচি হচ্ছে শহরে। প্রশ্ন উঠছে, এত বাধা-বিপত্তি হলে, পথচারী এবং নিত্যযাত্রীরা সময়ে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছবেন কী করে?
মূলত, এসএন ব্যানার্জি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউ, হাজরা মোড় এবং ডোরিনা ক্রসিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে মিটিং-মিছিলের জেরে তীব্র যানজট হয়।
মিছিলের পাশাপাশি রাস্তায় অতিরিক্ত প্রাইভেট গাড়ি নামার কারণে যানবাহনের গতিবেগ গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটারের আশপাশে থাকে। ইএম বাইপাসে যেহেতু মিছিলের ঝঞ্ঝাট এবং হকারের সমস্যা নেই। ফলে ওই এলাকায় গাড়ি গড়ে ৩০-৩৫ কিলোমিটারের আশপাশে চলে। এই কারণে মানুষ দ্রুত গন্তব্যেও পৌঁছতে পারেন। কিন্তু যখনই তাঁরা শহরে ঢোকেন, গাড়ি গতি শ্লথ হওয়ার কারণে ভোগান্তি বাড়ে।
পথচারীদের অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিত হকার সমস্যা নিয়ে জেরবার হতে হয় তাঁদের। তার উপরে মিটিং-মিছিলের কারণে রাস্তায় বেরোনো মানে চূড়ান্ত নাকাল হওয়া। কলকাতার ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডের অধীনে রয়েছে ২৮৫ বর্গ কিলোমিটারের কাছাকাছি (ভাঙড় বাদে) এলাকা। প্রায় আড়াই হাজার কর্মী নিয়ে যান শাসন করে ট্র্যাফিক বিভাগ। খড়্গপুর আইআইটি-র তরফে এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশকে নানা প্রস্তাব দেওয়া হলেও ফুটপাত দখলের কারণে ট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সামগ্রিক ভাবে ধাক্কা খাচ্ছে।
শহরের গতি কী ভাবে বাড়ানো যায়, সে জন্য নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করছে লালবাজার। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার মেয়ার পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘যাই ঘটে যাক, হকারদের নিয়ম মেনে ফুটপাতের একটি অংশ ছেড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় হকারি করতে হবে।’ এ বিষয়ে খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ ভার্গব মৈত্রের কথায়, ‘কলকাতায় গাড়ির চাপ দিন দিন বাড়ছে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টকে আরও চাঙ্গা করতে হবে। মিটিং মিছিল হোক ছুটির দিনে নির্দিষ্ট স্থানে।’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও বলেন, ‘শহরের ট্র্যাফিকের উন্নতিতে যা যা দরকার আমরা তা করে থাকি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য পথ দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু কমানো।’