এদিন সকালে আরএন মুখার্জি রোডে ট্রাস্টি অফিসে ঢোকার সময়ে কৃষ্ণকে পাকড়াও করেন হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশকর্মীরা। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা কৃষ্ণ দামানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হেয়ার স্ট্রিট থানায় বসিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁকে এদিন সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আজ, শুক্রবার তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পেশ করা হবে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, কৃষ্ণ দামানি নিজের পরিবারের তিন থেকে চার জন সদস্যের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি খুলেছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে কর্মচারীদের একাংশকে নিয়োগ-সহ স্কুল সংক্রান্ত নানা খাতে ট্রাস্টির থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সেই টাকা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিগুলিতে ট্রান্সফার করা হতো বলে অভিযোগ। তদন্তকারীদের দাবি, ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত ওই স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন কৃষ্ণ দামানি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
এরপর সাউথ পয়েন্ট ও এমপি বিড়লা স্কুল যে ট্রাস্টের অধীনে, সেই সাউথ পয়েন্ট এডুকেশন সোসাইটির তরফে দামানি-সহ মোট চারজন আধিকারিক ও কর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ১০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ সামনে এনে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে তারা দাবি করেছে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অভিযোগগুলির তদন্ত নিজেরাই করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাতে একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
ট্রাস্টের হয়ে লিগ্যাল ফার্ম ‘ফক্স অ্যান্ড মণ্ডল’-এর তরফে দেবাঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্ট এমপি বিড়লা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাউথ পয়েন্ট এডুকেশন সোসাইটির ট্রাস্টি হর্ষবর্ধন লোধা এই তদন্ত শুরু করেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে নিজেদের তদন্তে যে সব তথ্য সামনে আসে, তা চাঞ্চল্যকর। অন্তত দশ কোটি টাকার প্রতারণা করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে এই কাজ চলেছে। আমার মক্কেলের পুলিশি তদন্তের উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা রাখছি, এই তদন্তের মাধ্যমে আমরা আমাদের হারানো সম্পত্তি ও অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারব।’
বাইপাসের ধারে মুকুন্দপুরে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের একটি দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে। সেই কাজের দায়িত্ব ছিল দামানি ও অন্য অভিযুক্তদের উপরে। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা সরানো হয়েছে। সাত বছরেও তাই ওই স্কুলের কাজ শেষ হয়নি বলে বিবৃতিতে দাবি করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ২০২২ সালে প্রথম এই অনিয়মের অভিযোগটি সামনে আনেন স্কুলেরই এক প্রাক্তন ছাত্র। এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণ দামানির তরফ থেকে অবশ্য কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।