জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কার্যপদ্ধতি জেনে পুলিশ রীতিমতো থ। পুলিশ জানাচ্ছে, যে ভাবে আঁটঘাট বেঁধে দলটি ডাকাতি করত, সেই প্লট ধরে সিনেমা হলে তা সুপারহিট হতে বাধ্য। কোথায় ঘাঁটি গাড়বে, কবে ডাকাতি হবে, কোথায় আর কীভাবে করা হবে আর চোরাই মাল নিয়েই বা কী করা হবে সব কিছুই করা হতো পরিকল্পনা মাফিক।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, উত্তরপ্রদেশ থেকে দল বেঁধে বাংলা বা অন্য রাজ্যে যায় এই দুষ্কৃতীরা। একসঙ্গে ৫০-৬০ জন এসে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এক-একটি জায়গায় মাস দুয়েকের জন্য ডেরা বাঁধে এক-একটি দল। সব দেখেশুনে কোথায় ঘর ভাড়া নেবে তা ঠিক করে দলের ম্যানেজার। স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড থেকে কাছে অথচ লোকজনের আনাগোনা বা সচেতনতা কম এমন জায়গাতেই খোঁজা হতো ঘর।
যে জায়গায় ঘাঁটি গাড়ে তার ৪০-৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ডাকাতির ছক করে এরা। চুরি-ডাকাতির প্ল্যানে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে বাজারহাট, রান্নাবান্নার চাপ নিতে হতো না এদের। বাজার করার দায়িত্ব ম্যানেজারের। রকমারি পদ রান্নার জন্য সঙ্গে থাকত এক রাঁধুনি।
থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত হতেই ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে শুরু হতো রেকির কাজ। ডাকাতির জন্য সপ্তাহের দু’দিন বাছা থাকত।
বাকি পাঁচ দিন কখনও সাইকেলে, কখনও বা হেঁটে ফেরি করার আছিলায় এলাকা রেকি করত দুষ্কৃতী-দল। জায়গা ঠিক করে ট্রেনে, বাসে বা সাইকেলে করে গিয়ে ডাকাতি করে ফিরে আসত সেই ভাড়াবাড়িতে। চোরাই জিনিস এ রাজ্যে কখনও বিক্রি করত না দলটি। ভালো মালপত্র পেলে দলের দু-একজন সে সব নিয়ে চলে যেত উত্তরপ্রদেশে, সেখানেই হতো সব বিক্রিবাটা।
পুলিশ জানিয়েছে, কাটোয়ায় দলটি এসেছিল জানুয়ারি মাসে। যে ধরনের এলাকা ওদের পছন্দ সেদিক থেকে কাটোয়া মিলপাড়ায় যে জায়গায় দলটি ঘরভাড়া নিয়েছিল তা ছিল বেশ উপযুক্ত। ফেব্রুয়ারি মাসেই এলাকা ছাড়ার ছক করেছিল তারা। এর মধ্যেই ৫-৬টি জায়গায় ডাকাতি করে ফেলে দলটি।
তদন্তে নেমে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মুর্শিদাবাদের বাজারসাউ থেকে তাদের ৪টি সাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে সাইকেলে করেই দলের সদস্যরা ডাকাতি করতে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ডাকাতির পর সাইকেল রেখে ফিরে আসে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, এই দলের বাকি সদস্যদের খোঁজ পেতে আশপাশের জেলার থানাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিন চারেক আগে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে একটি সোনার দোকানে দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। তার তদন্তে নেমেই এই বুদায়ুঁ গ্যাংয়ের খোঁজ পায় পুলিশ। শুক্রবার রাতে দলের ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার চোরাই সামগ্রী। আপাতত দলটির সমস্ত কার্যকলাপ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।