জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের এক ইস্পাত কারখানার মালিক তথা ব্যবসায়ী শিবকুমার সারদার নাতি রেহান। তার পরিবারের অভিযোগ, রেহানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ারই প্ল্যান কষেছিল দুষ্কৃতীরা। যদিও গোটা ঘটনা নিয়ে সন্দিহান পুলিশ দুষ্কৃতীদের সন্ধানে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি শুরু করেছে নাকা চেকিং।
প্রতিদিনের মতো এদিন রানিগঞ্জের বাড়ি থেকে পরিবারের গাড়িতে করে আসানসোলের স্কুলে যাচ্ছিল রেহান। সঙ্গে ছিলেন শুধু চালক নরেশ রায়। তিনি জানান, সকাল ৭টা নাগাদ জামুড়িয়া থানার বোগড়া মোড়ের কাছে আচমকা তাঁদের গাড়ির সামনে একটি স্করপিও গাড়ি এসে পথ আটকায়। বিহারের নম্বরপ্লেট নাগালো সেই গাড়ি থেকে জনা সাতেক দুষ্কৃতী নেমে এসে তাঁদের গাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দু’জনের মুখ ছিল আংশিক ঢাকা।
একজন গাড়িচালক নরেশকে এসে হিন্দিতে বলে— স্যার আপনাকে ডাকছে। সন্দেহ হয় নরেশের। গাড়ি যাতে হাতছাড়া না হয় তাই বুদ্ধি করে গাড়ির চাবি খুলে নিজের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নেন তিনি। সাতসকালের ব্যস্ত সময়ে মাঝরাস্তায় কয়েকজনকে গাড়ি আটকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খটকা লাগে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও পথচারীদের। এগিয়ে আসেন তাঁরা।
নরেশ বলেন, ‘এলাকার লোকজন ভাবছিলেন যে হয়তো রাস্তায় গাড়ি চালানো নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তাই তাঁরা এসে মীমাংসা করার চেষ্টা করছিলেন। অন্যায় করে থাকলে ওই গাড়ির লোকজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে বলে আমাকে।’ এর পর এই নিয়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হতেই দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে এলাকা ছাড়ে। চলে যায় আসানসোলের দিকে। চালক নরেশও রেহানকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে পুরো ঘটনা তার পরিবারকে জানান।
এর পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ডিসিপি (সেন্ট্রাল) অরবিন্দ কুমার আনন্দ, এসিপি (সেন্ট্রাল টু) বিমানকুমার মৃধা, রানিগঞ্জের সার্কেল ইনস্পেক্টর সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন জামুড়িয়া থানার ওসি রাজশেখর মুখোপাধ্যায় ও আইসি মেঘনাথ মণ্ডল। গাড়িচালক নরেশ রায়কে তাঁরা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গতিবিধি জানার চেষ্টা করে পুলিশ।
সঙ্গে সঙ্গে মহকুমার সমস্ত থানা এলাকায় শুরু হয় নাকা চেকিং। দুষ্কৃতীদের খোঁজ পেতে সমস্ত এলাকায় নামে পুলিশের বিশেষ নজরদারি দল। যদিও সোমবার রাত পর্যন্ত ওই স্করপিও গাড়ি বা দুষ্কৃতী কারও হদিশ মেলেনি। জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে ব্যবসার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কারখানা রয়েছে রেহানের দাদু শিবকুমার সারদার। তাঁর কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করতেই দুষ্কৃতীরা তাঁর নাতিকে অপহরণ করতে চেয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে তাঁর পরিবারের তরফ থেকে।
যদিও কী কারণে দুষ্কৃতীরা গাড়ি ঘেরাও করেছিল তা নিয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। সূত্রের খবর, অপহরণকারীরা রানিগঞ্জের মোড় থেকে পিছু করছিল রেহানকে। চালকের উপস্থিত বুদ্ধিতেই যে বড় বিপদ থেকে ওই খুদে বেঁচেছে তা স্বীকার করেছে তার পরিবারও।