কয়েক বছরের মধ্যে আমূল বদলে গিয়েছে ছবিটা। ২০২০-তে অতিমারী শুরুর আগেও মহানগরের রাস্তায় মাঝরাত পর্যন্ত বাস মিলত। তবে করোনার উপদ্রবে চোখের পলকে যেন বদলে গিয়েছে শহরের পরিবহণ মানচিত্রের প্যাটার্নটাই। এখন তো রাত আটটা থেকেই শহরের রাজপথে ক্রমশ কমতে শুরু করে বাসের সংখ্যা।
বিভিন্ন রুট আবার মর্জিমাফিক কমে যায়। যার অনিবার্য পরিণতিতে রাত দশটা বাজলেই কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে মহানগরের বেসরকারি গণ-পরিবহণ। যেমন, শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দান রুটের মিনিবাস। রাত বাড়লে তা আর হাওড়া ময়দান পর্যন্ত যেতে চায় না। কর্মীরা বলেন, ‘সব প্যাসেঞ্জার হাওড়াতেই নেমে যান। ময়দান পর্যন্ত খালি চালিয়ে লাভ কি!’
২৩০ নম্বর রুট অর্থাৎ কামারহাটি-চিড়িয়াখানা রুটের বহু বাসই যে রাত বাড়লে আর চিড়িয়াখানা পর্যন্ত না গিয়ে এক্সাইড মোড় থেকে ঘুরে কামারহাটি রওনা দেয়, তার নজিরও রয়েছে। রাত বাড়লে শুধু যে বেসরকারি বাসেই এমন নৈরাজ্য শুরু হয়, তা নয়। সুযোগ বুঝে স্বেচ্ছাচারিতা চালায় অটোও। যেমন, উল্টোডাঙা-বাগুইআটি রুট। দিনে এই রুটে অসংখ্য অটো চললেও রাতে সংখ্যাটা হাতেগোনা।
তখন অটো চলে কেষ্টপুর ভিআইপি থেকে মিশন বাজারের মধ্যে। উল্টোডাঙা-সল্টলেক রুটের বহু অটোও এই কাটা রুটে জড়ো হয়। ভাড়াও দিনের তুলনায় পাঁচ-সাত টাকা বেশি। বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন, অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘ডিজ়েলের দাম যে জায়গায় গিয়েছে, তাতে যথেষ্ট যাত্রী না পাওয়া গেলে তেলের পয়সাটুকু উঠবে না। রাত বাড়লে যাত্রীর সংখ্যা এত কমে যায় যে বাস চালানো মানেই ক্ষতি।’
তবে কি বাসের ভাড়া কিছুটা বাড়ালে সব দিক রক্ষা হয়? রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘বাসের ভাড়া বাড়ানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। মুখ্যমন্ত্রী চান না বাসভাড়া বাড়ুক।’ কলকাতার মতো শহরে রাত দশটায় বাস অপ্রতুল—এ প্রসঙ্গে কী বলবেন?
পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে যাত্রীদের তরফে এমন অভিযোগ এখনও আসেনি। তবে কথাটা যখন শুনলাম, তখন অবশ্যই বেসরকারি বাস সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলা হবে। সাধারণ যাত্রীদের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।’