Valentine Day 2024 : আজ ঘরে বসেই ‘ফিফটি শেড্‌স অফ গ্রে’ – online food delivery app companies started special offers to customers in valentine months


কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়

‘খুব সাবধান, হ্যান্ডকাফের চাবি যেন হারিয়ে না-যায়। তা হলে কিন্তু খুব বিপদ হয়ে যাবে’, সতর্কবার্তা দিতে দিতে হেসে কুটিপাটি অভিনেত্রী ঋ। ‘একটাই অনুরোধ ডেলিভারি পার্সনদের, বড্ড জরুরি অবস্থায় এই ধরনের অর্ডার দেওয়া হয় তো, তাই ওঁরা যেন দেরি না-করেন’, চাপা রসিকতা প্রখ্যাত রেডিয়ো-ব্যক্তিত্ব, প্রেজ়েন্টার ও অভিনেতা মিরের।

২৭ বছরের ক্রিস্টিয়ানকে দেখে শুরুতেই কেমন একটা দুর্নিবার আকর্ষণ অনুভব করেছিল ২১ বছরের অ্যানা। সেই আকর্ষণই পূর্ণতা পেয়েছিল ক্রিস্টিয়ানের ‘প্লে রুমে’। ঘরে ঠাসা ছিল বিডিএসএম-এর জিনিসপত্র। সেখানেই অ্যানার চোখ ব্লাইন্ডসে ঢেকে দেয় ক্রিস্টিয়ান। তার পর…।

ফিফটি শেড্‌স অফ গ্রে-তে যে ব্লাইন্ডসে ঢাকা পড়েছিল অ্যানার চোখ, পালক লাগানো যে হ্যান্ডকাফে খাটের রেলিংয়ে বাঁধা পড়েছিল তার হাত, এ বার ওই ব্লাইন্ডস এবং হ্যান্ডকাফ হয়ে উঠতে পারে আপনারও ফ্যান্টাসি পূরণের উপকরণ। অপেক্ষা শুধু বিভিন্ন রকম ফুড ডেলিভারি অ্যাপ খুলে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে স্পেশাল অফারে’ একটা ক্লিক।

ফেব্রুয়ারি পড়তেই স্পেশাল অফারের ব্যাপারটা যাতে কোনও কাস্টমারের চোখ এড়িয়ে না-যায়, সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে শুরু করেছিল অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ সংস্থাগুলো। না না, এই অফারের সঙ্গে পেটের খিদের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একটু ‘অন্য রকম’ খিদে মেটায়। ভ্যালেন্টাইন্স ডে স্পেশাল অফারে ক্লিক করে আগ্রহীরা অনায়াসে তাঁদের পছন্দসই জায়গায় আনিয়ে নিতে পারেন স্পেশাল প্যাকেজ।

‘সেক্সুয়াল ওয়েলনেসের’ জিনিসপত্রে ঠাসা এই প্যাকেজে থাকে নানা ধরনের ফ্লেভার্‌ড কনডোম, লুব্রিকেটর বা ল্যুবস, ব্লাইন্ডস, হ্যান্ডকাফ এবং অ্যাঙ্কলকাফের সরঞ্জাম। অর্থাৎ, যে কোনও কাপল তাঁদের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি চরিতার্থ করতে গেলে প্রথমেই যে সব জিনিসের কথা মনে করেন, তার সবই তাঁরা পাবেন বাড়িতে বসেই। যাঁরা বাড়িতে এমন ডেলিভারি নিতে ঠিক স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না, তাঁদের মনপসন্দ জায়গায় যাতে ডেলিভারি হয়ে যায়, সেই ব্যবস্থাও রেখেছে ই-কমার্স সংস্থাগুলো।

ওষুধের দোকানে গিয়ে কনডোম কেনার সময়ে দোকান খালি হওয়ার অপেক্ষায় থাকা লোকজনের মনে যা-ই থাকুক না কেন, তাঁরা যে সাহস করে এই ধরনের সেক্সুয়াল ওয়েলনেস প্রোডাক্ট কিনে ফেলবেন এমনটা আশা করাই অন্যায়। কিন্তু সে জন্য কি তাঁদের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি চিরকাল কল্পনাতেই থেকে যাবে?

রেডিয়ো ব্যক্তিত্ব মির বলছেন, ‘অনলাইন ডেলিভারি অ্যাপগুলোকে ধন্যবাদ। ওঁরা এগিয়ে এসেছেন বলেই মানুষ সামান্যতম অস্বস্তিতে না-পড়ে পছন্দসই সব জিনিস আনিয়ে নিজের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি চরিতার্থ করতে পারছেন।’ অভিনেত্রী ঋ-র কথায়, ‘দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পরস্পরের সহমতে যদি একান্ত ব্যক্তিগত কিছু সময় নিজেদের মতো কাটান, তা হলে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। এই ধরনের অ্যাপের দৌলতে তাঁদের ওই ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো অনেক বেশি আকর্ষক হয়ে উঠছে।’

কয়েক বছর আগেও যে সব জিনিস আম পাবলিকের সুদূরতম কল্পনাতেই আটকে ছিল, সেগুলো এ বার আসছে ক্রমশ হাতের মুঠোয়। তা হলে কি সমাজ কিছুটা হলেও আধুনিক হচ্ছে? ‘এর সঙ্গে আধুনিকতার কোনও সম্পর্ক নেই, সবটাই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি’, স্পষ্ট মত সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায়ের। তাঁর কথায়, ‘যে জিনিসগুলো বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ফলাও প্রচার চলছে, সেগুলো তো সারা বছরই বিক্রি হয়।’ তা হলে কি সবটাই বিপণন, ফ্যান্টাসি বলে কি কিছুই নেই?

প্রশান্তবাবুর জবাব, ‘আমাদের কি ফ্যান্টাসি কম পড়িয়াছে? কানামাছি ভোঁ ভোঁ তো ছিলই … সঙ্গে যাকে পাবি তাকে ছোঁ-র অপশনও দেওয়াই ছিল।’ সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারেরও বক্তব্য, ‘যৌনতা ও সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলো এতটাই আদিম যে, সেগুলোকে আধুনিকতার পরিচায়ক বলে মনে করার কোনও কারণ দেখি না। যৌনতা ছিল বলেই তো দেহব্যবসা পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশাগুলোর অন্যতম হয়ে আজও টিকে রয়েছে।’

লেখিকা বলছেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজার বড় হয়েছে, বিপণনের কায়দা বদলেছে। এখন বাড়িতেও পাওয়ার সুবিধে হয়েছে— এই পর্যন্ত। মির এবং ঋ-ও যৌনতার স্বাধীনতাকে আধুনিকতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে নারাজ। তবে একই সঙ্গে তাঁদের অভিমত, ‘অনলাইনে বাড়িতে মদ ডেলিভারি যেমন অনেককে, বিশেষ করে বহু মহিলাকে অস্বস্তির হাত থেকে মুক্তি দিয়েছিল, এটাও তেমনই। এটা কম বড় পাওনা নয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *