সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এমন ভাষাতেই ভর্ৎসনা করা হয়েছে। আদালতের ক্ষোভ থেকে রেহাই পাননি রেল কর্তৃপক্ষও। সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ কমানো নিয়ে সাত বছর ধরে রাজ্য ও রেলের মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি চলছে। ঝিলের দূষণ কমাতে একযোগে কাজ করার জন্যে গত অক্টোবরে রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এবং রেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত।
সেই কমিটির নভেম্বরে হওয়া প্রথম বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু সে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে সংশয়ী বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণকুমার বর্মা। তাঁদের মন্তব্য, ‘রাজ্যের মুখ্যসচিবের চেয়ারম্যানশিপে কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয়, ঝিলের দূষণ কমানোর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করছে এবং কাজের দায়িত্ব এক দপ্তর অন্য দপ্তরের দিকে ঠেলছে।’
মামলাকারী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘এই মামলা সাত বছর ধরে চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এখনও ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য ও রেলের তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা হয়নি। পরিবেশ আদালতের কড়া মন্তব্যের পরেও কাজের কাজ কিছু হবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নই। যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ নিশ্চিন্ত হওয়ার জায়গা নেই।’
গত নভেম্বরে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ঝিলে সরাসরি মেশা তরল বর্জ্যের দূষণ কমাতে প্রস্তাবিত সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) তৈরির জন্যে জমি দেবে রেল। প্রয়োজনীয় জমির জন্যে নভেম্বরেই কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) রেলের অনলাইন পোর্টালে আবেদন করে বলে ৩ ফেব্রুয়ারি জমা পড়া হলফনামায় আদালতকে জানায় রাজ্য।
কিন্তু সেই আবেদনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের কেন হলফনামায় উল্লেখ নেই, তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে আদালত। আবার এ ক্ষেত্রে রেলের যা-যা দায়িত্ব ছিল, তা তারা পালন করেছে কিনা, তারও কোনও উল্লেখ নেই বলে বক্তব্য আদালতের। আদালতের পর্যবেক্ষণ, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হলেও তাঁর অধীন রাজ্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তো বটেই, এমনকী রেলের থেকেও এ ব্যাপারে তথ্য জোগাড়ে মুখ্যসচিব ব্যর্থ।
আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যসচিবকে বর্তমান অবস্থা জানিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকেও আদালতের নির্দেশ, এসটিপি’র জমির আবেদন নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।