সম্প্রতি যে সার্কুলার জারি করেছে স্বাস্থ্যভবন, তাতে দ্বর্থ্যহীন ভাষায় বলা হয়েছে, বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নামের মধ্যে রিসার্চ শব্দটি থাকলে নিয়মিত ভাবে তাদের গবেষণার প্রমাণস্বরূপ নানা নথি দেখাতে হবে স্বাস্থ্য দপ্তরকে। এ প্রসঙ্গে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী বলেন, ‘অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল রিসার্চ শব্দটি তাদের নামে ব্যবহার করে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সংক্রান্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠা পেতে। এবার থেকে কতগুলো গবেষণার কাজ হলো, কতগুলি দেশি-বিদেশি জার্নালে গবেষণাপত্রের আকারে প্রকাশিত হলো, সে সব তথ্য দু’ বছর অন্তর সরকারকে নিয়মিত জানাতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল।’
স্বাস্থ্যভবনের ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট শাখার তথ্য বলছে, শুধু কলকাতা পুর এলাকাতেই অন্তত ২০টি হাসপাতাল রয়েছে যাদের নামের মধ্যে রয়েছে রিসার্চ শব্দটি। জেলাস্তরে সংখ্যাটি আরও বেশি। ২৭টি স্বাস্থ্যজেলায় সংখ্যাটি শতাধিক। সন্দেহ, মাঝারি ও ছোট মাপের ‘রিসার্চ সেন্টার’ প্রতিষ্ঠানগুলিতেই গবেষণার নামে চোখে ধুলো দেওয়া হয়।
কলকাতা ও জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠীর অধিকর্তা শ্বেতা শর্মা বলেন, ‘জমি কেনা, নির্মাণ, পুর কর ও আয়কর ছাড়, সুনাম ও ভাবমূর্তির মতো নানা সুবিধা মেলে। যেখানে মানবকল্যাণের জন্য গবেষণার কাজ করা হচ্ছে, বা করা হচ্ছে বলে দেখানো হচ্ছে, সেখানে সুবিধা তো মেলেই। প্রতিটি গবেষণার ব্যাপারে সরকার তাই জানতে চাইতেই পারে।’
ঠিক সে সব কথাই স্বাস্থ্য দপ্তর জানতে চেয়েছে ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট বিধির ৪(২সি) ধারাকে উদ্ধৃত করে। তাতে বলা আছে, লাইসেন্সিং অথরিটির অনুমতি ছাড়া কোন বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তাদের নামে রিসার্চ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না। করতে হলে চিকিৎসা-গবেষণা সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি জমা দিতে হবে লাইসেন্সিং অথরিটিকে। এবং তার জন্য ১০ দফা শর্ত পূরণের প্রমাণ দাখিল করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
বড় হাসপাতালগুলি সরকারি এই পদক্ষেপকে স্বাগতই জানিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি রূপক বরুয়া বলেন, ‘খুবই ভালো পদক্ষেপ। সুবিধা যখন মিলছে, তখন কোন প্রতিষ্ঠান কী কী গবেষণা করছে বা করছে না, কোথা থেকে কত টাকা অনুদান পাচ্ছে বা পাচ্ছে না, সেগুলো তো সরকারের জানা দরকার।’