এ দিন স্ত্রী এবং মেয়ের দেহ প্রথম দেখেন মৃত মৌসুমির স্বামী রজতেন্দ্র স্মরণ সান্যাল। স্ত্রী এবং মেয়ের এমন পরিণতি দেখে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কৃষি দপ্তরের কর্মী অবসরপ্রাপ্ত রজতেন্দ্র পিরতলায় গত ১৫ বছর ধরে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। মৃদুভাষী রজতেন্দ্র পাড়ার মাত্র কয়েক জনের সঙ্গেই কথা বলতেন।
কিন্তু এলাকার মানুষের সঙ্গে একেবারেই মিশতেন না মৌসুমি ও দিয়া। বাইরে কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। তাঁরা ঘরেই থাকতেন। ঘরের জানালা-দরজাও দিনের বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকত। সান্যাল বাড়ির অন্দরমহল থেকে ঝগড়া, অশান্তির শব্দ কোনওদিন শুনতে পাননি প্রতিবেশীরা। সেই বাড়িতেই এমন মর্মান্তিক ভাবে মা এবং মেয়ের মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই হতবাক হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বুধবার সকাল ১১টার সময় বাজারে বেরিয়েছিলেন রজতেন্দ্র। যাওয়ার সময় তিনি দরজার বাইরের গ্রিলে তালা লাগিয়েই বেরোন। আধ ঘণ্টা পরে বাড়িতে ফিরে তালা খুলে ঘরে ঢুকেই তিনি দেখতে পান খাটের উপরে উপুড় হয়ে পড়ে আছে মেয়ে দিয়া। ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছেন স্ত্রী মৌসুমি। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তড়িঘড়ি খবর দেন খড়দহ থানার পুলিশকে। পুলিশ এসে দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মা এবং মেয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে খড়দহ থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেন রজতেন্দ্রকে। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, দিয়া পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। গত বছর ডাক্তারি প্রবেশিকা নিট পরীক্ষা দিলেও পাশ করতে পারেননি। এর পর থেকে একটু একটু করে মানসিক অবসাদ তৈরি হয় ওই তরুণীর। তবুও ফের এ বছর নিটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিয়া।
মানসিক অবসাদ বেড়ে চলায় চিকিৎসাও চলছিল তাঁর। রজতেন্দ্র জানিয়েছেন, ইদানীং সংসারের যে কোনও বিষয় নিয়েই অশান্তি হত মা এবং মেয়ের মধ্যে। এই অশান্তির জেরেই সম্প্রতি মেয়েকে শেষ করে নিজে আত্মহত্যা করবে বলেও শাসিয়েছিলেন মৌসুমি। এ দিন রজতেন্দ্র বলেন, ‘স্ত্রীর মুখের কথা এমন ভাবে ফলে যাবে, বুঝতেই পারিনি।’
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর দাস বলেন, ‘সকালে বাজারে যাওয়ার রাস্তাতেই দেখা হয়েছিল রজতেন্দ্রর সঙ্গে। কথাও হয়েছিল। বাজার থেকে ফল নিয়ে বাড়িতেও ফিরেছিলেন ভদ্রলোক। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি এই মর্মান্তিক খবরটা জানিয়ে কেঁদে ফেললেন। কী ভাবে এ সব হল আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।’
পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রথমে মেয়েকে খুন করেছেন। পরে আত্মঘাতী হয়েছেন মা। পুলিশ সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখছে।’