চার বছরে হাজার বৃদ্ধি! মুখে তো সাফল্যের হাসি খেলা করার কথা। অথচ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশ করা ‘অল ইন্ডিয়া লেপার্ড (চিতাবাঘ) এস্টিমেশন’-এর পঞ্চম অধ্যায়ের রিপোর্ট ভরে রইল আশঙ্কা ও দুশ্চিন্তায়। কারণ কোনও একটা নয়। লেপার্ডের এলাকা কমে যাওয়া, চোরাশিকারের মতো দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলির পাশাপাশি মাথাচাড়া দিচ্ছে বড় আশঙ্কার জায়গা। সংরক্ষিত এলাকার বাইরে লেপার্ডের সংখ্যাবৃদ্ধি। হিসেব দেখলে, দেশে লেপার্ডের ৬৭%-ই থাকছে প্রোটেক্টেড এরিয়ার বাইরে!এই প্রসঙ্গেই চিন্তার অন্যতম জায়গা হিসেবে উঠে আসছে উত্তরবঙ্গ। লোকালয়ে, চা-বাগানে চিতাবাঘের হামলার ঘটনা বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ব্যালান্স নষ্ট তো করছেই। বঙ্গের উত্তরে লেপার্ডের সংখ্যাবৃদ্ধির হারও অবাক করছে বনাধিকারিকদের।
‘স্টেটাস অফ লেপার্ড ইন ইন্ডিয়া, ২০২২’ শীর্ষক রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ সালে গোটা দেশে যেখানে লেপার্ড বা চিতাবাঘ ছিল অন্তত ১২,৮৫২টি, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৮৭৪। অর্থাৎ হাজারের বেশি সংখ্যাবৃদ্ধি। তবে দেশের সব রাজ্যেই যে লেপার্ড বেড়েছে, এমনটা নয়। বিহার, উত্তরাখণ্ড, তেলঙ্গানা, ছত্তিসগড়, ওডিশায় লেপার্ড আগের থেকে কমেছে। আবার মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাডুতে তাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
সংখ্যার বিচারে সবার মধ্যে অন্যতম চমকপ্রদ লাফ অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের। ২০১৮ সুমারিতে যেখানে উত্তরবঙ্গে ৮৩টি লেপার্ডের দেখা মিলেছিল, ২০২২ সুমারিতে সেই সংখ্যাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৩। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ২০০%-এর কাছাকাছি! শুধু বঙ্গেই নয়, উত্তরপূর্ব পার্বত্য অঞ্চল ও ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমির অন্তর্গত আরও দুই রাজ্য, অসম ও অরুণাচল প্রদেশেও চিতাবাঘ ব্যাপক হারে বেড়েছে।
চার বছরে অরুণাচলের লেপার্ড সংখ্যা ১১ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২, অসমে ৪৭ থেকে তা পৌঁছেছে ৭৪-এ। চিন্তার কারণ এখানেই। সমীক্ষা বলছে, উত্তরবঙ্গের সংরক্ষিত অরণ্য বক্সা টাইগার রিজার্ভে দেখা মিলেছে মাত্র ৬১টি লেপার্ডের। আর ওই জঙ্গল ব্যবহার করেছে ৭৪টি লেপার্ড। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, সংরক্ষিত জঙ্গলের বাইরে উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি ও তরাই এলাকায় লেপার্ডের আনাগোনা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সংঘাতের আশঙ্কাও।
জলপাইগুড়ির বানারহাটের পরিবেশপ্রেমী ভিক্টর বসু যেমন বলছেন, ‘৮৩ থকে একলাফে ২৩৩-এ যে উত্তরণটা ঘটেছে, তা চিতাবাঘ সংরক্ষণের সদর্থক দিক। এতে প্রমাণিত হয়, এখানে চিতাবাঘদের আদর্শ খাদ্যভান্ডার ও আবাস সুনিশ্চিত আছে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাদি চিতাবাঘেরা বনের ডেরা ছেড়ে সুরক্ষিত ভাবে সন্তান প্রসবের জন্যে চা বাগানের নালায় আশ্রয় নেয়। ফি বছর ওই সময়েই মানুষ-লেপার্ড সংঘাত তুঙ্গে পৌঁছয়। এই সময়টার বেশি সতর্কতা প্রয়োজন।’