Question Smuggle,টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাচার চক্রে পরিযায়ী শ্রমিকরাও! – migrant workers were brought to smuggle questions in the madhamick exam


স্নেহাশিস নিয়োগী

মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্ন পাচার করতে আনা হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের! মোটা টাকার বিনিময়েই এই প্রশ্ন পাচারের চক্রে যুক্ত করা হয়েছিল তাঁদের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রথম আর এ কমিটির বৈঠকে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, গত ২ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই চেন্নাই, কোচি, মুম্বই এবং পুণে সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিজের জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চলে এসেছিলেন।ওই পরীক্ষায় মালদা থেকে যে ২৯ জন ছাত্রছাত্রীকে মোবাইল সমেত হাতেনাতে ধরা হয়েছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য সামনে এসেছে। পরীক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ও সিম সহ প্রযুক্তিগত সাহায্য করতে পরিযায়ীদের ভূমিকা ছিল মধ্যস্থতাকারীর। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মোবাইলে প্রশ্ন বের করে তা অন্যত্র পাচার করে আবার সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তর তাঁরা পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করার কাজ করতেন।

পর্ষদ জানতে পেরেছে, পরীক্ষার হলে বসে মোবাইল সমেত হাতেনাতে ধরা পড়েছে, এমন ছ’জন পরীক্ষার্থীও এখন পরিযারী শ্রমিক হিসেবে রাজ্যের বাইরে কাজে চলে গিয়েছে। তাই এদিনের বৈঠকে তাদের হাজির করা যায়নি। সূত্রের খবর, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেন্যু সুপারভাইজার, সেন্টার সেক্রেটারি, অফিসার ইনচার্জ, ইনভিজিলেটর এবং জেলা কনভেনরদের বৈঠকে জানা গিয়েছে, যাঁরা এই প্রশ্ন পাচারের চক্র চালাচ্ছিলেন তাঁরাই অভিভাবক সেজে মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন।

অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে বেরিয়ে এলে তার সমাধান বা উত্তর কষার দায়িত্বে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষকরা। তার মধ্যে তিনজন শিক্ষক মালদার তথাকথিত মিশন স্কুলে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি এক শিক্ষকের সন্দেহজনক ভূমিকাও পর্ষদের নজরে রয়েছে।

এর আগে পরীক্ষার সময়ে শুধু ‘এমপি ২০২৪ কোশ্চেন আউট’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সন্ধান মিলেছিল। যেখানে ১৪৭ জন গ্রুপ মেম্বার ও সাতজন অ্যাডমিন ছিল। কিন্তু ছোটখাট আরও অনেক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল। এদের বেশিরভাগই পরীক্ষার্থী। এ রকমই একজন পরীক্ষার্থী কাম গ্রুপ অ্যাডমিনকে তিন বছরের জন্য পরীক্ষায় বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পর্ষদের আঞ্চলিক কমিটি। সে চাইলে ফের ২০২৭ সালের পরীক্ষায় বসতে পারবে।

জেরায় দেখা গিয়েছে, প্রশ্ন পাচার চক্রে মালদার গৌড় কলেজের এক ছাত্র এবং এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থীও পুরো চক্রটিতে যুক্ত ছিলেন। অভিযুক্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ পরীক্ষার সময়ে মোবাইল নিয়েই কেন্দ্রে ঢোকেনি। বাইরে থেকে অন্য কেউ জানালা দিয়ে পরীক্ষার্থীকে তা সরবরাহ করেছিল। অথবা বাড়ি থেকে ছাত্রীরাও মোবাইল নিয়ে গিয়ে ছাত্রদের হাতে তুলে দিয়েছে।

যদিও পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল সমেত ধরা পড়া অধিকাংশ পড়ুয়া এদিনের বৈঠকে প্রথমে দাবি করে, টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে নয়, নিজের ভাই, বোন অথবা ভাইপো-ভাইঝি এবং অন্য আত্মীয়দের মোবাইল ফোন ও সিম সহ প্রযুক্তিগত সাহায্যের জন্য তারা এসেছিল। তাদের যুক্তি, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীরা পড়াশোনা না করায় ফেল করে যাবে, এই আশঙ্কা থেকেই পাচার চক্র তৈরি করা হয়।

দুই পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, তাদের কাঁচা বাড়ি। বাড়িতে কেউ না থাকায় চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে ফোন রেখে আসতে পারেনি। যদিও পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার সময়ে তারা কেন ফোন জমা দেয়নি, তাও স্পষ্ট করেনি। কিন্তু টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে শেষ পর্যন্ত তারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাচারের কথা স্বীকার করে নেয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *