উদ্যোগী পুরসভা, কলকাতা কি তবু ফিরে পাবে ফুটপাথ – kmc started to evict the hawkers from the footpath according to court order


দেবাশিস দাস

কলকাতা ফুটপাথ হারিয়েছে, আজ নয়, বহু বছরই। শহরের বাসিন্দাদের হাঁটার জায়গা ফিরিয়ে দিতে অনেক প্রশাসনিক প্রয়াসের কথা বহু বার শোনা গিয়েছে। ফুটপাথ ফেরাতে বামেদের আমলে হয়েছিল ‘অপারেশন সানশাইন।’ কিন্তু ছবিটা বদলায়নি। উল্টে শহরের ফুটপাথে বেড়েছে হকারের সংখ্যা। বেড়েছে দখলদারি।আদালতের নির্দেশে তৃণমূল পরিচালিত কলকাতার পুরবোর্ড ফের নেমেছে ফুটপাথ উদ্ধারে। হকারদের এক সারিতে বসিয়ে পথচারীরা যাতে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন, সে জন্যে ফুটপাথের একাংশ ফাঁকা করার চেষ্টা চলছে। এই কাজে হকার, পুলিশ ও পুরসভার মধ্যে সমন্বয় রক্ষায় গড়া হয়েছে টাউন ভেন্ডিং কমিটিও। গ্র্যান্ড হোটেলের গাড়িবারান্দার নীচে এবং লেক মার্কেট লাগোয়া ফুটপাথে হকারদের এক সারিতে বসানোর কাজ ইতিমধ্যে মিটেছে নির্বিঘ্নে।

গড়িয়াহাটেও এই কাজ হয়েছে আংশিক ভাবে। কিন্তু গ্র্যান্ড হোটেলের গাড়িবারান্দার নীচের ফুটপাথ ছেড়ে নিউ মার্কেটের ফুটপাথে এলেই বোঝা যায়, পুরসভার প্রয়াসে সুফল দূরঅস্ত্। হাতিবাগান, শিয়ালদহ, পোস্তা, বড়বাজার, জানবাজার, এসপ্ল্যানেড, নিউ মার্কেট, চাঁদনিচক, বেহালার মতো হকার-অধ্যুষিত এলাকায় ফুটপাথে হকার নিয়ন্ত্রণের কাজ থমকেই। কলকাতা তার হারানো ফুটপাথ আদৌ ফিরে পাবে কিনা, তা হয়ে উঠছে মস্ত প্রশ্ন।

একাধিক হকার সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৃহত্তর কলকাতা মিলিয়ে মোট হকারের সংখ্যা দু’লাখ পঁচাত্তর হাজার। এর মধ্যে কলকাতার মূল অংশে রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ হকার। পুরসভার সহায়তায় টাউন ভেন্ডিং কমিটি হকারদের শংসাপত্র এবং পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। তবে পুরকর্তারা এখনও জানাতে পারেননি, ঠিক কত হকারকে এই শংসাপত্র ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।

বিপুল সংখ্যক হকারকে নিয়ন্ত্রণে আনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। হাতিবাগানের বাসিন্দা অধ্যাপক অরিন্দম দত্তর কথায়, ‘একাংশে হকার বসবেন, অন্য অংশে লোকজন দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করবেন, আর এক অংশ দিয়ে লোকজন হাঁটবেন–কলকাতার ফুটপাথ ততটা চওড়া নয় মোটেই। এত জায়গা ফুটপাথে পাওয়া যাবে কিনা, সংশয় রয়েছে।’

হরিদেবপুরের বাসিন্দা প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত গুহ বলেন, ‘ফুটপাথ হাঁটার যোগ্য হোক, নাগরিক হিসেবে একান্ত ভাবেই চাই। তবে এই চাওয়াকে বাস্তবায়িত করা খুব কঠিন বলেই মনে হয়।’ হকার নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাউন ভেন্ডিং কমিটি অবশ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফুটপাথের বড়জোর এক তৃতীয়াংশে বসবেন হকাররা। পথচারীদের জন্যে থাকবে বাকি দুই-তৃতীয়াংশ। হকারদের বসতে হবে ফুটপাথের এক দিকে।

হকার সংগ্রাম কমিটির নেতা শক্তিমান ঘোষ, হকার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির সভাপতি অসিত সাহা, দক্ষিণ শহরতলির হকার সংগঠনের নেতা শক্তি মণ্ডলের বক্তব্য, শহরের সব হকারকে টাউন ভেন্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। কোনও হকারের কোনও অসুবিধা হলে তাঁকে টাউন ভেন্ডিং কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে।

কমিটির এই সিদ্ধান্তে অবশ্য হকারদের একাংশ প্রবল অসন্তুষ্ট। নিউ মার্কেটের হকারদের একাংশ এরই মধ্যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পুরসভার সামনে। আবার হকার ‘দৌরাত্ম্যে’র বিরুদ্ধে মিছিল এবং সমাবেশ করেছেন হগ মার্কেট এবং নিউ মার্কেটের স্থায়ী দোকনদাররা। তাঁদের সংগঠন জয়েন্ট ট্রেডার্স ফোরামের প্রতিনিধিরা মেয়র ফিরাহদ হাকিমের সঙ্গেও দেখা করেছেন।

Kolkata Auto Route : নতুন করে বেশ কিছু রুটে অটো চালুর ভাবনা

সংগঠনের সম্পাদক রাজীব সিং বলেন, ‘হকারদের দাপটে আমাদের ব্যবসা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চাই পুরসভা নিউ মার্কেট এলাকায় দ্রুত হকার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে দিক আমাদের।’ সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকায় হকারদের দাপট নিয়ে সম্প্রতি নবান্নের তরফেও পুরসভাকে সতর্ক করা হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশ, নবান্নের সতর্কবার্তার পরেই অবশ্য পুরসভা হারানো ফুটপাথ উদ্ধারে সক্রিয় হয়েছে। পুরসভার উদ্যান ও পার্কিং বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার বলেন, ‘আমরা হকার নিয়ন্ত্রণের কাজ করছি। কোথাও সম্যসা হলে আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টাও চলছে। আমরা আশাবাদী।’ নাগরিকরাও আশায় বুক বাঁধছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *