লোকসভা নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার পরিকাঠামোগত উন্নয়নে জলপ্রকল্প, রাস্তাঘাট, আলো, বিদ্যুৎ তো আছেই পাশাপাশি সন্দেশখালি ব্লকের একাধিক প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেন তিনি। এ দিন হাবরার বাণীপুরের আম্বেদকর স্পোর্টস অ্যাকাডেমির মাঠের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ১৮৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এই সমস্ত কাজের জন্য খরচ হবে মোট ২১২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া এ দিনের মঞ্চ থেকে ৫৭০টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। এর জন্য খরচ হবে মোট ৫৯৭ কোটি টাকা। উদ্বোধন এবং শিলান্যাসের পাশাপাশি জেলার ২২টি ব্লকের উপভোক্তাদের হাতে সরকারি পরিষেবাও প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিনের প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে ভিলেজ রিসোর্স পার্সনদের ৭৫০ টাকা ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণাও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুর ১২.২৪ মিনিটে বাণীপুর আম্বেদকর স্পোর্টস একাডেমির মাঠের মূল মঞ্চের লাগোয়া মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আসার আগে থেকেই মাঠ ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। এ দিন মাঠে আলাদা আলাদা ব্লকে বসেছিলেন কন্যাশ্রীর মেয়েরা থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, আশাকর্মী থেকে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে গাড়িতে করেই মূল মঞ্চের দিকে যাওযার কথা ছিল তাঁর। গাড়ির ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হেঁটেই যান। কন্যাশ্রীর মেয়েরা প্ল্যাকার্ড তুলে জয়ধ্বনি দিতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে লক্ষ্মীর ভান্ডার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিলারা। মঞ্চের বাঁদিকেই ছিল সৃষ্টিশ্রী নামের একটি স্টল। হাবরা-১ ব্লকের রাউতারা পঞ্চায়েতের মিতালী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে তৈরি সামগ্রী সেখানে প্রদর্শিত হয়েছিল।
সেই স্টলেই সটান ঢুকে পড়েন মমতা। কয়েকটি গলার হার দেখে পছন্দ হয় মুখ্যমন্ত্রীর। বিট ক্রিস্টাল, সেমি পালস এবং কেমিক্যাল বিটের তিন ধরনের পাঁচটি গলার হার কিনে নেন মুখ্যমন্ত্রী। হারের দাম ১১০০ টাকাও দেন তিনি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য নীলিমা পাল বলেন, ‘১১০০ টাকার ৫টি হার কিনেছেন দিদি। সত্যি আমরা আপ্লুত।’ হাতে কন্যাশ্রীর পোস্টার নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রুমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে দেখার।’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় রয়েছে ১৯৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রতিটি পঞ্চায়েতেই মুখ্যমন্ত্রী ভিলেজ রিসোর্স পার্সন গড়েছেন। এঁরা মূলত গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারীদের পরিষেবার কাজ করে থাকেন। পঞ্চায়েত এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা থেকে নিকাশি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য বিষয়-সহ একাধিক কাজকর্ম করে থাকেন।
ভিলেজ রিসোর্স পার্সনরা এই কাজের জন্য একটা ন্যূনতম পারিশ্রমিক পেতেন। এ দিন প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে ভিলেজ রিসোর্স পার্সনদের ভাতা ৭৫০ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জন্য এটাই ছিল শেষ সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান।
এ দিনের মঞ্চ থেকে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, বার্ধক্য, বিধবা ভাতা, মেধাশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের আবেদনকারী উপভোক্তাদের হতে সরকারি পরিষেবা তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, পূর্তদপ্তর ও একাধিক দপ্তরের কাজের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।