বুধবার মৌলালি যুবকেন্দ্রে মঞ্চের তরফে আয়োজিত নাগরিকসভার শুরুতে অন্যতম মুখপাত্র মহাশ্বেতা সমাজদার যে প্রস্তাবনাটি পড়েন, তাতে দেশ ও রাজ্যে বিজেপি কী ভাবে কণ্ঠরোধের ষড়যন্ত্র করছে–তার বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি বলা ছিল, ‘এই সভা মনে করে এই রাজ্যে তৃণমূল সরকার স্বৈরতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক কায়দায় সরকার চালাচ্ছে। বিজেপির মতো ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রাজনৈতিক ভাবে জমি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সর্বশেষ উদাহরণ সন্দেশখালি। সন্দেশখালির নারীদের প্রতিরোধকে এই সভা কুর্নিশ জানাচ্ছে।’
প্রস্তাবনাতেই স্পষ্ট, তৃণমূলকে ছাড় না দিয়েই ফের ভোটের আগে প্রচারে নামতে উদ্যোগী মঞ্চ। মানবাধিকারকর্মী সুজাত ভদ্র সিএএ নিয়ে বিজেপি কী ভাবে ধর্মের নিরিখে দেশের মানুষকে বেনাগরিক করার চক্রান্ত করছে, সে কথা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্য, ‘হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা চলছে। বিরোধীদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বাধ্য করা হচ্ছে তা মেনে নিতে। এটা আর কোনও রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডায় নেই। সব দলই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে আমরা পছন্দ মতো পোশাক পরতে পারব কিনা, খাবার খেতে পারব কিনা, ধর্মাচারণ করতে পারব কিনা–এগুলোও প্রশ্নের মুখে পড়বে।’
রাজনৈতিক কর্মী ও ভাঙরের পাওয়ার-গ্রিড আন্দোলনের নেতা অলীক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘কেউ যদি বলে আমরা তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএমকে মদত করছি, তাদের বলতে পারেন, হ্যাঁ করছি। কারণ, বিজেপির হিন্দু রাষ্ট্রকে আমাদের আটকাতেই হবে।’ মঞ্চের সংগঠক কুশল দেবনাথ জানান, মঞ্চের বক্তব্য সমন্বিত অন্তত এক লক্ষ লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সব জেলা শহরে অন্তত একটি করে সভার আয়োজন করা হবে নির্বাচনের আগে। এ দিন সিএএ-র প্রতিবাদে মৌলালিতে বিক্ষোভও দেখান মঞ্চের কর্মীরা। একদা এই মঞ্চের কেউ কেউ এখন তৃণমূলে। তেমনই একজন তন্ময় ঘোষ বর্তমানে শাসকদলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।
তাঁর বক্তব্য, ‘মঞ্চে বহু মতের মানুষ আছেন। তাঁরা যে বিজেপিকেই প্রধান শত্রু মনে করছেন, সেটাকে স্বাগত জানাই। আর পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের বিরুদ্ধে যে কথা বলা যায়, তার প্রমাণ আজকের সভাই।’ বঙ্গ-বিজেপি অবশ্য মঞ্চের কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ।