ইতিমধ্যে তাঁর মুকুটে যোগ হয়েছে ইংলিশ চ্যানেল, রটনেস্ট, ক্যাটালিনা এবং মলোকাই চ্যানেল জয়ের পালক। এবার নিউ জিল্যান্ডের কুক প্রণালী জয়ের লক্ষ্যে শুক্রবার রওনা হচ্ছেন কালনার জলকন্যা সায়নী দাস। ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিলের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চ্যানেল জয়ের লক্ষ্যে জলে নামবেন তিনি।শুক্রবার ১৫ মার্চ বাবা রাধেশ্যাম দাস ও মা রূপালি দাসকে নিয়ে কলকাতা থেকে বিমানে উড়ে যাচ্ছেন সায়নী। প্রথমে সিঙ্গাপুর তারপর নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ড হয়ে ১৬ মার্চ তিনি পৌঁছবেন ওয়েলিংটন। এর আগে প্রতিটি চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে প্রথম বারেই সাফল্য পেয়েছেন কালনা শহরের বারুইপাড়ার মেয়ে সায়নী।
বর্তমানে কলকাতার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার পদে তিনি কর্মরত। কুক প্রণালী পারাপারের জন্য চাকরির ফাঁকে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবার তত্ত্বাবধানেই চলেছে সায়নীর অনুশীলন। কলকাতায় সেন্ট্রাল স্যুইমিং পুলে নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি কালনায় ভাগীরথীতে শীত-গ্রীষ্মে টানা অনুশীলন করেছেন সায়নী।
নিউ জিল্যান্ডের উত্তর ও দক্ষিণ দ্বীপকে পৃথক করেছে কুক প্রণালী। উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বিস্তৃত প্রণালীটি পশ্চিমে তাসমান সাগরের সঙ্গে ও পুবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই প্রণালী একেবারেই শান্ত নয়, বরং বেশ বিপজ্জনক। প্রায়ই ঝড়-ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে উত্তাল হয় প্রণালীর জল।
প্রণালীর দৈর্ঘ্য ২৬ কিমি। প্রতিকূল পরিবেশে এত দীর্ঘ চ্যানেল পার হওয়া চ্যালেঞ্জ সায়নীর কাছে। বলেন, ‘এতদিন অন্য যে সমস্ত চ্যানেল পার হয়েছি, তার থেকে এটা কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। জল বেশ ঠান্ডা। পাশাপাশি আবহাওয়াও খুব খামখেয়ালি। পরিষ্কার আকাশ হঠাৎই পাল্টে গিয়ে শুরু হয়ে যায় ঝড়, বৃষ্টি। তাছাড়া এর জলে রয়েছে জেলিফিশ, সাদা হাঙরের মতো ভয়ঙ্কর প্রাণী। মলোকাই পার হওয়ার সময় বক্স জেলিফিশের আক্রমণে জখম হয়েছিলাম।’
এর সঙ্গে এবার সায়নীকে চিন্তায় রাখছে খাবারের মেনু। তিনি বলেন, ‘এর আগে যেখানে গিয়েছি সঙ্গে নিয়েছিলাম এখানকার সিদ্ধ চাল, ডাল। কিন্তু, নিউ জিল্যান্ডে বায়ো সিকিউরিটির কারণে এবার সে সব নিয়ে যেতে পারব না। ওখানকার চাল, ডাল খেয়ে হজমের সমস্যা হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’
বাবা রাধেশ্যাম দাস বলেন, ‘আগের চ্যানেলগুলো পার হওয়ার সময় সায়নী ছিল ছাত্রী। কিন্তু এখন সায়নী এক জন চাকরিজীবী। তাই চাকরির মাঝে সময় বার করে অনুশীলন করতে হয়েছে। তবে কালনার এসকেএম স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ওঁরা সাহায্য না করলে সায়নীর সপ্তসিন্ধু জয়ের লক্ষ্যপূরণ হয়তো অধরা থেকে যেত।’ কুক প্রণালী পার করলে সপ্তসিন্ধু জয়ের আরও কাছে পৌঁছে যাবেন বাংলার মেয়ে সায়নী দাস।