অস্থায়ী পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নাকি কোনও খবরের কাগজেই প্রকাশ করা হয়নি। সংস্থার ওয়েবসাইটেও নয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর নোটিস বোর্ডের ‘এক কোণে’ ছোট কাগজে সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। সদস্যদের একাংশের বক্তব্য, পরিষৎ-এর নোটিস বোর্ডের সেই বিজ্ঞপ্তি বাইরের কারও দেখা সম্ভব ছিল না। দেখেনওনি। তাই মাত্র একটাই আবেদন জমা পড়ে।সদস্যদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এমনটা করা হয়েছে যাতে কোনও এক কর্তাব্যক্তির পছন্দের কাউকে নিয়োগের ব্যবস্থা হয়।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী থেকে রবি ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী থেকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়–বাংলার সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বহু দিকপাল যে প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন, ১৩২ বছরের সেই পরিষৎ-এ কি এ বার ঘুণ ধরার লক্ষণ ফুটে উঠছে?
রবিবার, ১৭ মার্চ পরিষৎ-এর অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিং এবং কার্যনির্বাহী সমিতির নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নেই পরিস্থিতি সরগরম। বেশ কিছু দিন ধরে যে ভাবে চলছে প্রতিষ্ঠান, পরিষৎ-এর সদস্যদের অনেকেরই তা পছন্দ নয়। নিয়োগে বেনিয়ম থেকে কার্যনির্বাহী সমিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যকরী না হওয়ার মতো অনেক অভিযোগ তাঁদের।
এই আবহে কার্যনির্বাহী সমিতির নির্বাচনও গোপন ব্যালটে না করে ধ্বনি ভোটে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সদস্যদের একাংশ।
প্রকাশনা, সংগ্রহশালা এবং লাইব্রেরি–এই তিনটে বিভাগের জন্যে গোটা দেশের শিক্ষিতমহলেই পরিষৎ বিশেষ ভাবে সম্মানিত। এমন একটা প্রতিষ্ঠানে ঘুণ ধরার অভিযোগ কতটা সত্যি?
প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রবল দুর্নীতি সহ্য করতে না পেরেই আমি পদত্যাগ করেছি। কোষাধ্যক্ষ ছিলাম, অথচ অর্থ বরাদ্দ বা খরচ সংক্রান্ত কোনও ফাইলই আমাকে দেখতে দেওয়া হতো না।’ পরিষৎ-এর সদস্যরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে এখানকার অছি পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অছি পরিষদ ত্যাগ করেন। কিন্তু পরিষৎ-এর খরচ চালাতে দশ কোটি টাকার কর্পাস ফান্ড তৈরির ব্যবস্থা করেন। কোন খাতে বরাদ্দ অর্থ খরচ হবে, তার জন্যে ফান্ড কমিটির নিয়মিত মিটিং ডাকার কথা। কিন্তু গত এক বছরে কোনও মিটিং ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ সদস্যদের।
পরিষৎ-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারিদবরণ ঘোষ অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘কী ভাবে ভোট হবে সেটা তো আমাদের নিয়মাবলির মধ্যেই রয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বা রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর তৈরি করা নিয়ম তো আমরা বদলাতে পারি না।’ প্রেসিডেন্টের পাল্টা দাবি, ‘পরিষৎকে নিজেদের দখলে আনতে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে।’