এ বার থেকে রাজ্যের পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগ রয়েছে, এমন যে কোনও মামলায় নিজেদের প্যানেলের আইনজীবীদের বাইরে থেকে কৌঁসুলি নিয়োগের অনুমতি দিল নবান্ন। সূত্রের খবর, পুলিশকর্তাদের একাংশের তরফে রাজ্যের প্যানেলে থাকা আইনজীবীদের কয়েক জনকে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে, এমনকী তাঁদের বিরুদ্ধে নবান্নে জানানো হয়েছে অভিযোগও।
গত ৬ মার্চ অর্থ দপ্তরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কলকাতা, রাজ্য এবং সিআইডি-র যে কোনও মামলায় বাইরে থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও জানানো হয়েছে, বাইরের আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রেড অনুযায়ী সরকারের যে টাকার অঙ্ক বেঁধে দেওয়া রয়েছে, তা-ও এ ক্ষেত্রে মানতে হবে না। অর্থ দপ্তরের ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কলকাতা পুলিশ, রাজ্য পুলিশ, সিআইডি— সোজা কথায়, পুলিশ বাহিনী ও রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার যোগ রয়েছে, এমন যে কোনও মামলায় বাইরে থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টে একের পর মামলায় রাজ্যের হার নিয়ে নবান্ন উষ্মা প্রকাশ করেছে। লালবাজার ও ভবানী ভবনের কর্তাদের কাছে নবান্নের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা চলতে দেওয়া যাবে না— কলকাতা হাইকোর্টে এ সব ক্ষেত্রে আইনি সাফল্য পেতে যে আইনজীবীকে পুলিশ অতি দক্ষ মনে করবে, তাঁকেই সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। হাইকোর্টে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে আগের তালিকা বাদ দিয়ে শুক্রবারই প্রায় ১৪০ জন আইনজীবীর নতুন প্যানেল প্রকাশ করেছে রাজ্য।
নবান্ন সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টে গত কয়েক বছর ধরে মামলায় টানা হারের বিষয়টি নিয়ে নবান্নের কর্তারা ক্ষুব্ধ। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দু’-একটি মামলায় হারলে ক্ষতি ছিল না, কিন্তু এখন হাইকোর্টে যা হচ্ছে, তা ১-১০ গোলে হারার সামিল। এই ধরনের মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে সাম্প্রতিক কালে রাজ্য শেষ কোথায় জয় পেয়েছে?
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের এক অফিসার অনেক ভেবেচিন্তে বলছেন, ‘সম্প্রতি আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা করার অনুমতি দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তবে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ খারিজ করেছে। আবার শক্তিগড়ে রাজু ঝা খুনে সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে তদন্তের দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের হাতেই রেখে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। এগুলো বড় সাফল্য।’
নবান্নের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ— মামলা নিয়ে কথা বলতে গেলে পুলিশকর্তাদের কারও কারও সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন সরকারি প্যানেলে থাকা সিনিয়র কয়েক জন আইনজীবী। এমনকী, মামলার বিষয়ে জানাতে সময় চাইলে তাঁদের কেউ কেউ পুলিশ অফিসারদের সময় পর্যন্ত দেন না, আইপিএস অফিসারদের কারও কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার পর্যন্ত করা হয়েছে, এমনটা অভিযোগ।