তবে দু’পক্ষই আশাবাদী। তাদের কথায়, বিক্ষুব্ধ বলে কিছু হয় না, সবাই দলের অনুগত। কিন্তু ব্যারাকপুরের বাস্তব পরিস্থিতি কি তেমনটা বলছে? যথেষ্ট সংশয়ে দলেরই একনিষ্ঠ কর্মী সমর্থকরা। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূল ছেড়ে অর্জুন সিং বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হয়ে জিতে আসার পর ব্যারাকপুর জুড়ে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে আড়াআড়ি বিভাজন হয়ে গিয়েছিল।
পরে অর্জুন তৃণমূলে ফিরলেও তাঁর অনুগামীদের কাউকেই সেই অর্থে তৃণমূল গ্রহণ করেনি। তবে সেই অনুগামীরা অর্জুনের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করেছেন এতদিন। আবার অর্জুন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তৃণমূলে কোণঠাসা হয়ে পড়া গোষ্ঠীর অনেকে তাঁর শিবিরেই নাম লেখান। এর উল্টোদিকে রয়েছে পার্থ ভৌমিকের ঘনিষ্ঠ বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সুবোধ অধিকারী।
এই দুই বিধায়কের সঙ্গে অর্জুনের দ্বন্দ্ব গত কয়েক মাসে একাধিকবার প্রকাশ্যে এসে দলের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে। কিন্তু লোকসভার টিকিটের আশায় গত কয়েকমাস মুখ বুজে সে সবই সহ্য করেছেন অর্জুন। কিন্তু ব্রিগেডের মঞ্চে উপস্থিত অর্জুনকে উপেক্ষা করে পার্থকে টিকিট দেওয়ার পর ফের অর্জুন গেরুয়া শিবিরে ভিড়েছেন। তিনি দল বদলাতেই তাঁর অনুগামীরা বিজেপির হয়ে কাজ করবেন এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু যারা বিজেপিতে এতদিন থেকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে এসেছেন তাঁরা কতটা অর্জুনের হয়ে ময়দানে নামবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিজেপি সূত্র বলছে, অর্জুনকে প্রার্থী করায় দলের নিচুতলার একাংশ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরেও কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তৃণমূলে অর্জুনের অনুগামীদের অবস্থান নিয়েও। বিজেপি ছেড়ে অর্জুন তৃণমূলে ফেরত আসার পর দলের পদাধিকারী তো বটেই, কাউন্সিলার ও দলের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে থাকা কয়েকজনের সঙ্গেও তাঁর সখ্য তৈরি হয়েছিল। তাঁরা তৃণমূলে থাকলেও তাঁদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দু’দলের বিক্ষুব্ধরাই এখন জল মাপছে। তারা এখনই দল না ছাড়লেও তাদের স্বতঃস্ফূর্ততার অভাব ভাবাচ্ছে দুই দলকেই। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দু’পক্ষই তাদের বিক্ষুব্ধদের বিরোধী শিবিরে ঢুকিয়ে দিয়ে ছুরি মারার কৌশল নিতে পারে।
পার্থ ভৌমিক অবশ্য বলেন, ‘আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই তৃণমূল করি। ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কারও থাকতেই পারে। কিন্তু তৃণমূলের জন্য সবাই এককাট্টা। আমরা একটা পরিবার এবং লড়াইতে জিত আমাদেরই হবে।’ অন্যদিকে অর্জুনের বক্তব্য, ‘বিজেপি একটা পরিবার। সেই পরিবারের আমি প্রার্থী। নরেন্দ্র মোদীকে দেখে মানুষ ভোট দেবেন।’
অর্জুন টিকিট পাওয়ার আগে বিজেপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন দলের রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র। তিনি বলেন, ‘পুরোনো-নতুন বা বিক্ষুব্ধ বলে কোনও বিষয় নেই। এটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভোট। ব্যারাকপুরের মানুষ আবারও একবার মোদীজির পাশে থাকবেন।’