হাইভোল্টেজ ব্যারাকপুরে জোটের জটে আটকে বাম ও কংগ্রেস। ফলে ভোট ঘোষণা হয়ে গেলেও এখনও ঘোষণা হয়নি জোটের প্রার্থী কে হবেন। যা নিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা রীতিমতো হতাশ। সিপিএম যেমন তাদের একসময়ের শক্ত ঘাঁটিতে প্রার্থী দিতে বদ্ধপরিকর, তেমনই কংগ্রেসও নাছোড়বান্দা ব্যারাকপুর আসনটি নিয়ে। তার জেরে এখনও অনিশ্চিত প্রার্থীর নাম।আগামী ২০ মে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোট। ভোট যখন দুয়ারে, তখন জোটের প্রার্থী বাম না কংগ্রেসের হবে, তা এখনও ঠিক না হওয়ায় চর্চা শুরু হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দুই দল আদতে চাইছেটা কী? সাধারণ মানুষ তো বটেই, দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশও এখন এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
কারণ রাস্তাঘাটে বেরোলে এখনও প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ার দুই দলের কর্মী সমর্থকদেরই টিপ্পনি শুনতে হচ্ছে। বাম আমলে ব্যারাকপুর ছিল সিপিএমের খাস তালুক। টানা ১৯ বছর সাংসদ ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তড়িৎবরণ তোপদার৷ প্রার্থী হওয়ার পরই তাঁর কাছে প্রথমে ছুটে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক এবং পরে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং।
বিরোধী শিবিরের প্রার্থীরা যখন আশীর্বাদ নিতে তড়িৎবাবুর কাছে ছুটছেন, তখন তাঁর দল সিপিএমে ছন্নছাড়া অবস্থা। প্রার্থী ঠিক করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা বামেদের। কারণ, ব্যারাকপুর আসনটি দাবি করেছে কংগ্রেসও। কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থীই এ বার লড়াই করতে বদ্ধপরিকর, সে কথা তারা অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে নির্দিষ্ট জায়গায়।
তবে কংগ্রেস দাবি করলেও সিপিএম শ্রমিক মহল্লার ব্যারাকপুর আসন হাতছাড়া করতে নারাজ। ফলে সিপিএমও তাদের মতো করে চাপ রেখে চলেছে। সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে, শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান ব্যারাকপুরে বরাবরই নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে তারা। ফলে ব্যারাকপুর থেকে তাদের প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সূত্রের খবর, প্রয়োজনে বনগাঁ আসনটি কংগ্রেসের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে সিপিএম। কিন্তু ব্যারাকপুর কোনও ভাবেই সিপিএম ছাড়বে না। অন্যদিকে, কংগ্রেসও তাদের মতো করে চাপ বাড়ানোর কৌশল জারি রাখলেও সূত্রের খবর, অনেকটাই কেটে গিয়েছে জোটের জট। কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্বকে সিপিএম বোঝাতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছে।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই বামেদের তরফে সিপিএমের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। সূত্রের খবর, সিপিএমের হয়ে অভিনয় জগতের কেউ ব্যারাকপুর আসন থেকে লড়াই করতে পারেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের (শহর) সভাপতি তাপস মজুমদার বলেন, ‘আমরা ব্যারাকপুর আসনটি চেয়েছি সিপিএমের কাছে। আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী হয়।’
সিপিএম নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রার্থী নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের সিদ্ধান্তের দিকে আমরা তাকিয়ে রয়েছি। দল যেমন নির্দেশ দেবে সে ভাবেই আমরা কাজ করব।’ তবে জোটের প্রার্থী যেই হোন, প্রচারে যে তাঁরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন তা বলাই বাহুল্য। কারণ ইতিমধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থী পার্থ ভৌমিক এবং বিজেপির প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাঁরা প্রচার শুরু করে দিয়েছেন জোরকদমে।
কর্মিসভা থেকে শুরু করে মিটিং-মিছিল, দেওয়াল লিখন সবই শুরু হয়ে গিয়েছে। জোটের জট কাটিয়ে ব্যারাকপুর আসনের জন্য কবে বাম বা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রার্থী ঘোষণা করবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।