সফল ক্রীড়াবিদদের চাকরির জন্য বিভিন্ন সংস্থায় প্লেয়ার্স কোটা ছিল। কিন্তু এখন সেসব অতীত। প্লেয়ার্স কোটা বলে এখন আর কিছু নেই। ফলে সাফল্য অর্জন করলেও চাকরি জোটে না। একমাত্র ফুটবল ও ক্রিকেট খেলে কিছু অর্থ উর্পাজন করা যায়। প্লেয়ার্স কোটা তুলে দেওয়ায় জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারকে দায়ী করছেন দুর্গাপুর-বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কীর্তি আজাদ।
‘এই সময়’ পত্রিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কীর্তি বলেন, ‘ক্রিকেট খেলার জন্য আমি প্লেয়ার্স কোটায় স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (সেইল) অধীন বোকারো স্টিল প্লান্টে চাকরি পেয়েছি। আরও অনেকে ক্রিকেটার চাকরি পেয়েছে। শুধু সেইল নয়, রেল, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সরকারি সংস্থায় প্লেয়ার্স কোটায় চাকরি পেতেন সফল ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু মোদী সরকার এই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। প্লেয়ার্স কোটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোদী সরকার শুধু জাতপাতের রাজনীতি করছে। ১৯৮৩ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জয়ী হয়েছিল। সেই দলে আমি ছিলাম হিন্দু। কিরমানি ছিলেন মুসলিম, রজার বিনি ছিলেন খ্রিস্টান, বলবিন্দর সিং সাধু ছিলেন শিখ। আমরা তো জাতপাত দেখিনি। দেশের হয়ে খেলেছি। মোদী সরকার বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি দেওয়ার গ্যারিন্টি দিয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ।’
জয়ী হলে সংসদে গিয়ে প্লেয়ার্স কোটা চালু করার কথা বলবেন? কীর্তির জবাব, ‘অবশ্যই, ভালো ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে হলে তাদের রোজগারের একটা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পরিবারের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত হলে তবেই সে মন দিয়ে অনুশীলন করবে।’
দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি তথা আইএনটিটিইউসি নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় একসময় ভালো ফুটবল খেলতেন। প্রভাত বলেন, ‘খেলার দৌলতে প্লেয়ার্স কোটায় অ্যালয় স্টিল প্লান্টে চাকরি পেয়েছিলাম। অ্যালয় স্টিল, ডিএসপি সমেত ইস্কোতে দুর্গাপুর ও আশপাশের বহু ফুটবলার চাকরি পেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার এখন আর ক্রীড়াবিদদের চাকরি দিচ্ছে না। ফলে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ খেলার মাঠে যায় না।’
চাকরির সুযোগ না থাকায় বহু অ্যাথেলিট সাফল্য অর্জনের পরেও রোজগারের জন্য খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। দুর্গাপুরের কয়েকটি মাঠে অ্যাথেলেটিক্স, বাস্কেট বল, ভলিবল খেলা হয়। হকি খেলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একটা সময় ছিল ডিএসপি স্টেডিয়ামে টাউন ক্লাবের মাঠে হকি প্রতিযোগিতা হতো। ব্যতিক্রম শুধু ফুটবল ও ক্রিকেট।
দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিধান মজুমদার বলেন, ‘ফুটবল খেলে এখন অর্থ উপার্জন করা যায়। দুর্গাপুরে খুব একটা টাকা পাওয়া যায় না। তবে বর্ধমান ও কলকাতা ময়দানের ক্লাবগুলিতে সুযোগ পেলে টাকা পাওয়া যায়। একই ভাবে ক্রিকেটারদের টাকা দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। ফলে এই দু’টি খেলার জন্য এখনও মাঠে আসে ছেলারা। প্লেয়ার্স কোটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাকরির সুযোগ কমে গিয়েছে। একাধিক ভালো অ্যাথেলিট ও ভলিবল প্লেয়ার আছে। তাদের জন্য একটা চাকরি জোগাড় করার ব্যবস্থা করতে পারি না আমরা। হতাশ হয়ে যাই।’