Nadia News,ভিডিয়ো শুটে ঢাক বাজাতে বাজাতে আচমকা মৃত যুবক – nadia santipur man suddenly lost life while play dhak


এই সময়, কৃষ্ণনগর: পেশায় ঢাকি নন। তবু মনের আনন্দে শুক্রবার রাতে কাঁধে ঢাক নিয়ে একটানা বাজাচ্ছিলেন নদিয়ার শান্তিপুরের যুবক অনুপ মাহাতো। বাড়ির কাছে বটতলা। শনিবার ভোরে বারুণী তিথিতে গঙ্গা স্নানের জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিলেন গাজনের সন্ন্যাসীরা। তাঁদের কেউ অনুপের বন্ধু। কেউ ভাইয়ের মতো। তাঁদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন অনুপও।এক ঢাকির কাছ থেকে ঢাক কেড়ে নিয়ে ঢাক বাজাতে শুরু করেন বটতলায়। বাড়ি ফেরার আগে পাড়ার এক বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘আমার ঢাক বাজানোর একটা ফাটাফাটি ভিডিয়ো তুলে দে তো সোমেন। বাড়ি গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ব।’ সেই ভিডিয়ো-শুট চলছিল মাঝরাতে। পা নাচিয়ে, দেহ দুলিয়ে অনেক কায়দা করে ঢাক বাজাচ্ছিলেন তিনি।

তিন মিনিট চুয়াল্লিশ সেকেন্ড তোলার পরে হঠাৎই ঢাক নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনুপ। অন্য বন্ধুরা ছুটে এসে তাঁর মাথায় জল ঢেলে জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করে। না পেরে দ্রুত তাঁকে শান্তিপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁরা। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার জবাব দেন, মারা গিয়েছে বছর ত্রিশের ওই যুবক।

শুক্রবার মধ্যরাতে শান্তিপুর শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাহাতোপাড়ায় তাঁর চোখের সামনে এই ঘটনার পরে কেঁদেই চলেছেন সোমেন মাহাতো। তিনি বলেন, ‘অনুপদা আমার থেকে চার-পাঁচ বছরের বড়। তবে বন্ধুর মতোই সম্পর্ক। অনেকক্ষণ ঢাক বাজানোর পরে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ অনুপদা ঢাক বাজানোর একটা ফাটাফাটি ভিডিয়ো তুলে দিতে বলেছিল। বিভিন্নরকম তালে ঢাক বাজানোর ভিডিয়ো করছিলাম। ঢাক বাজাতে বাজাতে হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি ছবি তোলা বন্ধ করে মাথায় জল দিই। অন্যদের ডাকি। গাজনের সন্ন্যাসীরাও ছুটে আসেন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়েও গিয়েছিলাম। চোখের সামনে মৃত্যুর ঘটনা মানতে পারছিনা।’

বছর বারো আগে বিয়ে করেছিলেন অনুপ। দু’টি কন্যা সন্তান আছে তাঁর। ছোট ভাই মিঠুন বলেন, ‘দাদা, পেশায় তাঁতশ্রমিক হলেও ভালো ঢাক বাজাত। এক ঢাকির কাছ থেকে ঢাক কেড়ে নিয়ে মনের আনন্দে ঢাক বাজাচ্ছিল। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ সবার চোখের সামনেই ঢাক নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’

Child Marriage : ফুটবল খেলতে চায় নাবালিকা, বিয়ে ভাঙল কন্যাশ্রীর সৌজন্যে

তিনি বলেন, ‘দাদার শারীরিক কোনও অসুস্থতা ছিল না। শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বাড়ির কাছেই বটতলা। এ বার যারা গাজনের সন্ন্যাসী হবেন রাতে সেই বন্ধুরা জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। দাদা শিবভক্ত। অন্য বছরের মতো এবারও দাদা ঢাক বাজাতে গিয়েছিল। রাত বারোটা পর বাড়িতে ঢুকে রাতের খাবার কথা ছিল। দাদাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পরে স্যালাইন দেওয়া হয়। অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয় দাদার। বৌদিকে কী ভাবে বলব, বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত রাত দুটোর সময় সত্যিটা বলি।’

স্থানীয় পুরসভার কাউন্সিলার বৃন্দাবন প্রামাণিক বলেন, ‘নতুন তাঁতের শাড়িতে মার দেওয়া, ইস্ত্রি করার কাজ করত সোমেন। নানা রকম সমাজসেবার কাজেও যুক্ত ছিল। তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। আনন্দ করতে করতে চলে গেল ছেলেটা।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *