২০০৯ সালে বৈঠকে সিদ্ধান্ত
২০০৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় রায়গঞ্জের পানিশালাতে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল নির্মাণ হবে। তার জন্য টাকাও বরাদ্দ করা হয় বলে জানান তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গোলাম নবি আজাদ। যদিও সেই বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অনুপস্থিত ছিলেন। সেই বছরেই লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জ আসনে জয়ী হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সীর স্ত্রী দীপা দাসমুন্সী। কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার থাকলেও, সেই সময় রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার জমি অধিগ্রহণ করছে না বলে আন্দোলনেও নামে কংগ্রেস নেতৃত্বরা।
পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, চক্রান্ত করে এইমস ধাঁচের হাসপাতাল রায়গঞ্জের পরিবর্তে কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়। যা নিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক বিতর্ক এবং টানাপোড়েন চলেছিল। তবে দীর্ঘ ২৪ বছর কেটে গেলও পানিশালার স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে কৃষকরা এখনও আশায় রয়েছেন। তাঁদের একটাই দাবি যদি এখানে এইমস হয়, তবে তাঁরা এখনও নিজেদের জমি দিতে প্রস্তুত। সেই কারণেই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই এই বিষয়ে আর্জি জানাচ্ছেন তাঁরা।
কী বলছে রাজনৈতিক দলগুলি?
যদিও এই এইমস ইস্যুতে একে অপরকে দোষারোপ করেই দায় এড়িয়েছে বিভিন্ন দলের নেতৃত্বরা। জেলা কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দেখান স্বপ্নকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। তাই রায়গঞ্জ থেকে তা কল্যাণীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে জেলার মানুষ এখনও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের পালটা দাবি, এইমসের কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনওদিনই বলেননি, বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন সেটাই করেছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলায় দু’টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে, একটি রায়গঞ্জে অপরটি ইসলামপুরে। রায়গঞ্জে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট শুরু থেকেই মানুষকে বোকা বানানোর জন্য এইমস নিয়ে রাজনীতি করেছে। কারণ তখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস এবং রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। আর এখন তারা জোট করে সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
অপরদিকে জেলা বিজেপির দাবি, কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতি করছে এবং সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। কারণ এইমসকে হাতিয়ার করে তারা শুধু নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে চায়। তখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট, কেন্দ্রে ছিল কংগ্রেস। ওরা চাইলে জমি অধিগ্রহণ করতে পারত, কিন্তু করেনি। এখন তারা একসঙ্গে ভোটে লড়াই করছে। ওদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায় এইমসকে কল্যাণীতে নিয়ে গিয়ে উত্তর দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গের মানুষকে বঞ্চিত করেছেন।