যাদবপুরের কলা শাখার তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর অভিযোগের সূত্রপাত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে। গত ৪ এপ্রিল বাংলা বিভাগের প্রধানের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, ওই সময়ে এক রাতে বাড়ি ফেরার সুযোগ না থাকায় তিনি বাংলার এক সহপাঠীর সঙ্গে এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে পাঠরত এক সিনিয়র ছাত্রের মেসে যান। তিনি পালবাজার চত্বরে মেসে থাকতেন। সেই রাতে তিনজন মিলে মদ্যপান করেন। নেশার সুযোগ নিয়ে ওই সিনিয়র ছাত্র জোর করে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন।
অন্যজনের কাছে তিনি সাহায্য চাইলেও সেই ছাত্র এগিয়ে না এসে ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে ওই সিনিয়রকে সাহায্য করেন বলে অভিযোগ। এমনকী, পিরিয়ডস চলছে বলা হলেও তাঁকে রেয়াত করা হয়নি। এই ঘটনার পরে ক্যাম্পাসে গিয়ে কয়েকজনকে তিনি সব জানাতে গিয়ে দেখেন বাকিরা ইতিমধ্যে তা জেনে ফেলেছেন। এতে মানসিক ভাবে নির্যাতিতা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং অভিযোগ জানানোর অবস্থায় তিনি ছিলেন না।
পরে আরও এক ছাত্রের সঙ্গে সম্পর্ক হয় বলেও তাঁর দাবি। সেই ছাত্রও সম্পর্কের অছিলায় বার বার তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন, জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন এবং ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট খেতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রী তাঁর ফেসবুক পোস্টে এই অভিযোগপত্রগুলি আপলোড করেছেন। সমস্ত অভিযোগই দর্শন ও বাংলা বিভাগের প্রধানদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। দর্শন বিভাগের প্রধান এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি।
তবে বাংলার প্রধান জয়দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, গত শুক্রবার প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তিনি যাবতীয় অভিযোগ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে সব অভিযোগপত্র এখনও অবধি তাঁদের কাছে এসেছে তা খতিয়ে দেখে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিরসন কমিটি বা আইসিসির কাছে ফরোয়ার্ড করা হবে।
কিন্তু কেন ওই ছাত্রী পুলিশের কাছে যাননি বা এতদিন বাদে কেন অভিযোগগুলি সামনে আনলেন, এমন প্রশ্নও ক্যাম্পাসে কেউ কেউ তুলেছেন। ওই ছাত্রী একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, তিনি যাদবপুর থানায় গিয়েছিলেন কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। এ দিন ক্যাম্পাসে ওই ছাত্রীই জিবি ডেকেছিলেন বলে কারও কারও দাবি।
অবশ্য তিনি জিবিতে উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর বন্ধুমহলের কয়েকজনের বক্তব্য, এখন ওই ছাত্রী চিকিৎসাধীন। তাই ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি। তবে এ দিন পড়ুয়ারা মিলে ঠিক করেছেন, ওই ছাত্রী যদি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চান, তাহলে তাঁরা সহায়তা করবেন। ওই ছাত্রী যদি আইসিসির কাছেও অভিযোগ করতে চান তাহলেও পড়ুয়ারা পাশে আছেন।