Election Campaign : ক্যাম্পেন ইন ক্যাজ়ুয়ালস, ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ শাড়িও – political leaders are relying on comfortable clothing in lok sabha election campaign


তাপস প্রামাণিক

ভোটের জন্য জনতার কাছে পৌঁছতে প্রার্থীরা এখন মরিয়া। কাঠফাটা গরমে কেউ মাইলের পর মাইল হাঁটছেন, কেউ ঢুকে পড়ছেন গেরস্তের হেঁশেলে। ফুঁ দিয়ে উনুন ধরাতে সাহায্য করছেন বা খুন্তি কেড়ে রান্না করতে বসে যাচ্ছেন। ক্যাম্পেনিংয়ে এই ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠার পাশাপাশি ক্যান্ডিডেটদের পোশাকেও চোখে পড়ছে বিরাট পরিবর্তন। নেতার খোলস ছেড়ে বেরোতে ধুতি, পাজামা-পাঞ্জাবির বদলে ইনফর্মাল প্যান্ট-শার্ট বা টি-শার্টেই প্রচারে যাচ্ছেন অনেকে। তবে এই পরিবর্তন মূলত পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। মহিলারা পোশাক নিয়ে সে ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাননি এখনও। সাবেক শাড়িতেই ভরসা তাঁদের।তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর পাঁচজন নেতার থেকে একটু আলাদা। পলিটিক্সের ময়দানে নামার প্রথম দিকে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিই পরতে দেখা যেত তাঁকে। কিন্তু সেই স্টাইল স্টেটমেন্ট বদলেছেন তিনি। এখন বেশিরভাগ সময়ে সাদা টাইট-ফিট ফুলহাতা জামা আর প্যান্ট পরছেন। ঘাম মোছার জন্য গলায় রাখছেন নরম টাওয়েল। টাওয়েলের রং এক এক দিন এক এক রকম। পদযাত্রা না থাকলে চামড়ার স্যান্ডেলে, নয়তো পা-ঢাকা জুতোয় দেখা যায় অভিষেককে। হাতে কালো রিস্টওয়াচ।

ঘাটালের তারকা প্রার্থী দেব অন্য সময়ে ফ্যাশনেবল ড্রেস পরলেও ভোটের প্রচারে ক্যাজুয়ালসেই ভরসা। কোনও দিন সাদা ফুলহাতা শার্ট, কখনও গোলগলা টি-শার্টে রোড-শো করছেন। দেবের কথায়, ‘আমি হাতের সামনে যা পাই, সেটাই পরি। তবে গরমে সাদা ড্রেস সব সময়েই ভালো।’

বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ এক সময়ে আরএসএস করতেন। সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা সাধারণত গেরুয়া পাঞ্জাবি পরলেও দিলীপ তার ধার ধারেন না। বেশিরভাগ দিন তিনি হাফ হাতা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে প্রচারে যাচ্ছেন। প্যান্ট, টি-শার্টও থাকছে কোনও কোনও দিন। পায়ে স্নিকার্স। গলায় অবশ্য গেরুয়া উত্তরীয়। মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে হাফপ্যান্ট পরে টিভি চ্যানেলকে ইন্টারভিউ দিতেও দেখা যাচ্ছে দিলীপকে। তাঁর কথায়, ‘দিলীপ ঘোষ নিজেই একটা ব্র্যান্ড। ড্রেসে কী আসে যায়!’

দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী সারা বছর প্যান্ট আর হাফ-শার্ট পরেন। ভোটেও তাঁর পোশাক তেমন বদলায়নি। বলেন, ‘আমি নিত্যদিন যে পোশাক পরি, তা পরেই প্রচারে যাচ্ছি। প্রার্থীদের আলাদা কোনও পোশাক পরার প্রয়োজন আছে বলে আমি অন্তত মনে করি না।’

ফ্যাশন ডিজ়াইনার সোমা চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নেতাকে চিহ্নিত করতে আলাদা ড্রেস কোডের প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। তাই প্রার্থীরা ইনফর্মাল পোশাক পরলেও ভোটাররা তাঁদের ভালো ভাবেই অ্যাকসেপ্ট করছেন।’

বাঙালি রাজনীতিবিদদের মধ্যে ধুতি পরা নেতার সংখ্যা এখন হাতেগোনা। তাঁদের অন্যতম কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর আক্ষেপ, ‘আমি, সুদীপ (বন্দ্যোপাধ্যায়) আর সৌগত (রায়) ছাড়া আর তো কাউকে ধুতি পরতেই দেখি না। মাস কয়েক আগে খোঁজ নিয়ে দেখলাম, রাজ্যসভা ও লোকসভা মিলিয়ে মাত্র ১৩ জন সাংসদ ধুতি পরেন।’

Heat Wave in West Bengal : পোল-পারদের হিটে ফিট থাকাই চ্যালেঞ্জ

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতি সরল জীবনযাপন করেন। বাংলার তাঁতের শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক পরেন না। পায়ে থাকে হাওয়াই চপ্পল। রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল হোক বা বিদেশ সফর, মুখ্যমন্ত্রীর পোশাকে তেমন পরিবর্তন হয় না। গরমের হাত থেকে বাঁচতে প্রচারে গলায় একটা সাদা ওড়না জড়িয়ে রাখছেন মমতা। তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ বা বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়রাও মূলত শাড়ি পরেই প্রচার করছেন।

মেদিনীপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল পেশায় ফ্যাশন ডিজ়াইনার। তাঁর কথায়, ‘মানুষ কী পছন্দ করেন, সেটা রাজনৈতিক নেতাদের মাথায় রাখতে হয়। গ্রামের বেশিরভাগ মহিলা এখনও শাড়ি পরেন। বাঙালি সমাজে শাড়ির ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমি রোজ শাড়ি পরেই প্রচারে যাচ্ছি।’ রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী সব সময়েই সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর স্যান্ডেল পরেন। মিটিং-মিছিলে থাকলে পরেন স্নিকার্স। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী, অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি ৭০০ টাকা দিয়ে পাজামা-পাঞ্জাবি কিনেছি। আর একটা কম দামের চটি কিনেছি। সে সব পরেই প্রচার করছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *