বাম জমানায় তৈরি হকার সমস্যা আজও বহাল। ভোট এলেই আসানসোলের নাগরিকদের কাছে অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে শহরের ফুটপাথ। যে ফুটপাথ অবৈধ দখলদারদের কব্জায়। বাম আমলে আসানসোল বাজারের গির্জা মোড় থেকে রাহা লেন পর্যন্ত ফুটপাথের দখলদারি ছিল। বর্তমানে তৃণমূলের আমলে সেই সংখ্যা আর এলাকা আরও বেড়েছে।গির্জা মোড় থেকে একেবারে কালিপাহাড়ি ধরলে প্রায় ১১০০ দোকানদার ফুটপাথ দখল করে রয়েছেন। দখলদারদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে আসানসোলের গির্জা মোড় থেকে রামকৃষ্ণ মিশন পর্যন্ত ভিটি রোডের দু’ধারে। বিশেষ করে গির্জা মোড় থেকে বাস স্ট্যান্ড হয়ে রাহা লেনের মাথা পর্যন্ত এলাকা ব্যবসায়ীদের দখলে। এসবি গড়াই রোড এবং হটন রোডের ছবিও প্রায় এক।
এই দখলদাররা চিরকালই শাসকদলের ছত্রছায়ায় নিশ্চিন্তে রয়ে গিয়েছেন। আসানসোল শহরের প্রাণকেন্দ্র জিটি রোড মূলত বাজার এলাকা। প্রতিদিন শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়াও কয়েক লক্ষ মানুষ এখানে আসেন বাজার করতে। শহরে আসার পরে হাঁটার জন্য ফুটপাথ বলে কিছু নেই। এমনকী জিটি রোডের একটি অংশ ফুটপাথের দোকানদারদের মোটরবাইক দখল করে রাখে।
বেআইনি ভাবে পুরসভার নাকের ডগায় চলছে পার্কিং। জিটি রোডের ধারেই ইস্টার্ন রেলের মতো বড় স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলের পাঁচিল ঘেঁষা জায়গাও এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। বার বার এই নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। পুরসভা থেকে বিধানসভা, তার পর লোকসভা ভোট এলেই ভোটাররা দাবি তোলেন মুক্ত করা হোক ফুটপাথ। একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচুক শহরটা। অন্তত হাঁটার ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে সিপিএমের আমলে যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তৃণমূলের সময়েও তা বহাল রয়েছে। কিছু দিন আগে পুর চেয়ারম্যান অমর চট্টোপাধ্যায় ও ডেপুটি মেয়রদের সঙ্গে নিয়ে মেয়র বিধান উপাধ্যায় হটন রোড ও জিটি রোডের রাহা লেন পর্যন্ত ঘুরে দেখেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফুটপাথে অবৈধ দখলদার মুক্ত করা হবে। এ জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে সমীক্ষাও করা হয়।
তাতে দেখা যায়, গির্জা মোড় থেকে রাহা লেন পর্যন্ত রয়েছেন ৪২৩ জন দখলদার। কালিপাহাড়ি পর্যন্ত এলাকা ধরা হলে এই সংখ্যা ১২০০-রও বেশি। কিন্তু, সেই ফাইল এখন ঠান্ডা ঘরে। কেন ফুটপাথ দখলমুক্ত করা যায় না? এর জবাবে সিপিএম থেকে তৃণমূল, বিজেপি সব দলের নেতারাই দার্শনিকতার আশ্রয় নেন। জানান, বিষয়টি সামাজিক সমস্যা।
তার পরে বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে সমস্যা ঘাড় থেকে নামিয়ে দেন। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘আসানসোল বাজারের ফুটপাথ এবং জিটি রোডের দু’পাসে অবৈধ দখলের ফলে হাঁটাচলা করা যায় না। মাঝেমধ্যে গালিগালাজও শুনতে হয়। অথচ এদের জন্য হকার্স মার্কেট তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল।’
সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পুরসভা বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা করেনি। বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করা হোক, তাহলে মানুষেরও সুবিধা হবে।’ আর মেয়রের কথায়, ‘পুরসভা পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। সময় মতো তা দেখা যাবে।’