Human Trafficking : পাচার-কন্যার ঠিকানা হোম, খালি হাতে দেশে যাচ্ছেন দাদা – a bangladeshi girl was trafficked at india on december now she is in a home of howrah


অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায়

অনেক কাকুতি-মিনতি করে যখন হাওড়ার একটি হোমে বোনের দেখা পেলেন বছর ২১-এর ছেলেটি, তখন কারও চোখের জল বাঁধ মানেনি। ওই সামান্য সময়ের সাক্ষাতে ‘কেমন আছিস? ভালো আছি’-র বাইরে আর কোনও কথা বলা হয়নি। শুধু কেঁদেই গেছে ভারতের পড়শি দেশের দুই ভাই-বোন। বছর ১৬-র ওই কিশোরী বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে এ দেশে এসেছে গত বছরের ডিসেম্বরের একদম গোড়ায়। তার পর থেকে তার ঠিকানা এই হোম।

বোন যে এখানে আছে, তা কেমন করে জানলেন দাদা? ‘এই সময়’কে তিনি বললেন, ‘ওকে পুলিশ যখন হোমে পাঠিয়ে দেয়, ও হোম থেকে বাড়িতে ফোন করেছিল। ওর বাড়ির ফোন নম্বর মনে থাকায় যোগাযোগ করতে পেরেছে। আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু এ রকম কত মেয়ে তো…।’ দাদা এখন মরিয়া বোনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবই এনেছেন। রয়েছে নিজের পরিচয় পত্র-সহ অন্য সব ডকুমেন্টও।

তাই এ সব থাকা সত্ত্বেও যখন তাঁকে হোম কর্তৃপক্ষ সোমবার বোনের সঙ্গে দেখা করতে দিতে চাইছিলেন না, তিনি কেঁদে ফেলেন। হোম জানিয়েছিল, মা-বাবা ছাড়া সাক্ষাতের অনুমতি নেই। পরে তিনি কাগজপত্র দেখিয়ে, বাংলাদেশে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা করার সুযোগ পান। ওই চোখের দেখাটুকুই, বোনের এখনই ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই।

প্রশ্ন উঠছে, যেখানে ভারত-বাংলাদেশ মউ রয়েছে মানবপাচারের শিকার শিশু-মহিলাদের প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে, তা হলে এই দেরি কেন? কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন সূত্রে খবর, এই দেশ থেকে যা যা পেপার ওয়ার্ক করার তা করে ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে। ওখান থেকে প্রথমে কেসটির সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় পুলিশের থেকে কেস স্টেটাস নেবে মন্ত্রক। তার পরে তা পাঠাবে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ভারতকে অনুরোধ করবে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে। তার পরে এখান থেকে মেয়েটির নিজের দেশে ফেরা সম্ভব।

তবে এত আইনি জটিলতার কথা জানেন না দাদা। বললেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমি সব কাগজপত্র নিয়ে এলে বোনকে নিয়েই আমি ফিরতে পারত। মনে হয়েছিল, সব ইন্ডিয়াতে আটকে আছে। তা তো নয় দেখছি।’ তবে মন মানছে না। তবে, গত ডিসেম্বরে পেট্রাপোলে যখন মেয়েটিকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশি ‘এজেন্ট’ সালমা, তার পরই তাকে নিয়ে পাঁচ জনের একটা দল হাওড়ায় আসে। কিন্তু পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় ওই পাঁচ জনের মধ্যে ২ জন বেআইনি অস্ত্র-সহ গ্রেপ্তার হয়। বাকি তিন জনের খোঁজ চলছে। বাংলাদেশ পুলিশও খুঁজছে সালমাকে। ধৃত দু’জন আপাতত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা মেয়েটি যাতে দেশে ফিরতে পারে সেই চেষ্টা চালাচ্ছে, সেই সংস্থার পক্ষে কৃষ্ণা হালদার ‘এই সময়’কে বলেন, ‘ক্রস বর্ডার ট্র্যাফিকিংয়ের শিকার যাঁরা, তাঁরা খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে। এত রকমের আইনি জটিলতা থাকায় দেশে ফিরতে অনেকটা সময় লেগে যায়। সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার, এনজিও, আন্তর্জাতিক সংগঠন সকলকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’

তবে, মেয়েটির দাদার স্বস্তি এক জায়গাতেই। বাংলাদেশে থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বহু মেয়ের চিরতরে হারিয়ে যায়। তাঁর বোনের সৌভাগ্য যে বড় বিপদ হওয়ার আগেই সে পুলিশের নজরে পড়ে যায়। তাই মন খারাপের মধ্যেও তাঁর আশা, তিনি সঙ্গে নিয়ে যেতে না পারলেও খুব শিগগির বোন বাড়ি ফিরে যাবে, যেখানে ওর অপেক্ষায় রয়েছে মা-বাবা ও আরও দুই ভাই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *