দু’চোখে স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে স্নাতকোত্তর এবং বিএড ডিগ্রি অর্জনও করেছিলেন। ২০১৬ সালে মাত্র একবারই স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই যাত্রায় উতরাতে পারেননি। এরপর সংসারের জোয়াল টানতে ট্রেনে হকারি করে বেড়ান তালডাংরার সাবড়াকোন গ্রামের বধূ বৃষ্টি পাল। বাঁকুড়া-মেদিনীপুর লোকালে হকারি করে সংসার টানেন তিনি। SSC নিয়োগ দুর্নীতিতে একলপ্তে আদালতের রায়ে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার জনের। এই রায় দেখার পর বুক কেঁপে উঠেছে সেই বৃষ্টিরও। অস্ফুট শব্দে তাঁর স্বগোক্তি, ‘ভাগ্যিস চাকরিটা হয়নি, ভেসে যেতাম…’।স্বামী, সন্তান আর শাশুড়িমাকে নিয়ে সুখের সংসার বৃষ্টির। স্বামী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। ২০১১ সালে বিয়ের পর থেকে সংসারে ‘অভাব’ কোনওদিন উপলব্ধি করতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু, ২০১৪ সালে একটি দুর্ঘটনা তাঁর জীবনে এলোমেলো করে দেয়। চাকরি যায় তাঁর স্বামীর। এরপর সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়’। কিন্তু, জীবনযুদ্ধে মাথা নোয়াননি বৃষ্টি। সৎপথে রোজগার করে সংসার টানার জন্য লোকাল ট্রেনের লেডিস কামরায় হকারি শুরু করেছিলেন বিএড ডিগ্রিধারী এই কন্যা।
ডিগ্রির বোঝায় লাভ হয়নি। কিন্তু, ট্রেনে হকারির জন্য যে ভারী ভারী ব্যাগগুলো তিনি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাতে বিস্তর লাভ পেয়েছিলেন। শাড়ি, কুর্তি ফেরি করতে শুরু করেন বৃষ্টি। ধীরে ধীরে সাফল্য আসে তাঁর ব্যবসাতে।
বৃষ্টি পাল বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল সাতটা সাড়ে সাতটায় সাবকাড়োনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। বাসে ৯ কিলোমিটার দূরের পিয়ারডোবা স্টেশনে পৌঁছৈ লেডিস কামরাতে চড়ি। এরপর ঘুরে ঘুরে পোশাক বিক্রি করি। এতে আমার সংসার চলে।’ ২০১৬ সালে SSC দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সালের প্রায় ২৬ হাজারের চাকরি বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
‘OMR শিট খালি রাখিনি, ৫১ পেয়েছিলাম’, কোন ভিত্তিতে চাকরি নট? প্রশ্ন অশোকনগরের স্বর্ণালীর
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খিদের জ্বালা ঠিক কী আমি বুঝি। আমি চাই না যোগ্য কারও চাকরি যাক। এখনও যে সমস্ত চাকরি প্রার্থীরা খোলা আকাশের নীচে বসে রয়েছেন, তাঁদের জন্য কষ্ট হয়। কারণ বিয়েতে বাবার দেওয়া গয়নাগুলো বিক্রি করে বিএড করেছিলাম। অনেক স্বপ্ন ছিল। তা পূরণ হয়নি।’
SSC Recruitment Scam : ‘সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে চাকরি পেয়েছিলাম, আবার চাকরিহারা’
এখন একজন ‘মা’ হিসেবে সন্তানকে ‘দুধে ভাতে’ রাখাই লক্ষ্য বলে তিনি জানান। একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘যা যাওয়ার গিয়েছে। আর ফিরে পাব না।’ তবে ট্রেনে হকারি করে অন্তত সংসারের হাল ফিরিয়েছেন তিনি। স্বামীর নতুন দোকান হয়েছে গ্রামে। কিন্তু, নিজের উপার্জনের রাস্তা বন্ধ করেননি বৃষ্টি। রোজ জামা-কাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়েন হকারি করতে।