ব্যস! ডম্বর চকের রাজা বেকারির সামনে দিনভর লোকজনের আনাগোনা। কিন্তু কারও মুখেই নির্বাচন নিয়ে কোনও কথা নেই। কেন কালিম্পংয়ের বাসিন্দারা ভোট নিয়ে এমন নিরুত্তাপ? কালিম্পং শহরের কয়েক পুরুষের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সন্দীপ জৈন বলেন, ‘এ বারের ভোটের হালচাল দেখে আমরাও অবাক। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন কোনও আগ্রহ দেখছি না। মানুষ নিশ্চয়ই ভোট দেবেন। কিন্তু মানুষের আলোচনায় রাজনীতির তেমন কোনও গুরুত্ব দেখছি না।’
২০১৬ সালে কালিম্পং জেলার মর্যাদা পায়। যাঁর জন্য কালিম্পং জেলার মর্যাদা পায় সেই হরকাবাহাদুর ছেত্রীও এখনকার রাজনীতি নিয়ে তেমন একটা আগ্রহী নন। জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। তবে তাঁর সাফ কথা, ‘কেবল কালিম্পংই নয়, গোটা পাহাড়েই একটা নিরুত্তাপ মনোভাব কাজ করছে। কেন এমন হলো সেটা রাজনীতিবিদরাই ব্যাখ্যা করতে পারবেন।’
সাধারণ মানুষ কিন্তু বলছেন, পাহাড়ের রাজনীতি মানেই এখন কেবল টাকার খেলা। রাজনীতি নিয়ে নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁদের। যেমন আজও কালিম্পংয়ে জেলার পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিংবা জেলা বিচারকের পদ তৈরি হলেও পরিকাঠামো তৈরিতে এখনও পিছিয়ে। আজও পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি কালিম্পংয়ে।
যাঁরা পানীয় জলের ব্যবসা করেন, তাঁদের কথাতেই প্রশাসন চলে বলে অভিযোগ। কালিম্পংয়ের ডম্বর চক এলাকার বাসিন্দা দিলবাহাদুর রাই বলেন, ‘হরকা বাহাদুর ছেত্রী জেলার মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। আর কী পেয়েছে কালিম্পং? এ বারের লোকসভা নির্বাচনের পরেও যে কিছু মিলবে না, সেটাও আমাদের জানা।’
গত ৪ অক্টোবর সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয় কালিম্পংকে একেবারে মুষড়ে দিয়েছে। কেননা, সিকিমের পরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা কালিম্পংই। এখনও স্বাভাবিক নয় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের যান চলাচল। সিকিমের বাসিন্দারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। তিস্তা বাজারের যে সমস্ত বাসিন্দার ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছিল, আজও তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি।
করোনা সংক্রমণের সময়ে জিটিএর পক্ষ থেকে ত্রিবেণীতে হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে সেই হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তাটাই ধুয়ে গিয়েছে। পূর্ত দপ্তর থেকে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে অত্যন্ত ঢিমেতালে। তিস্তাবাজারের বাসিন্দা অম্বর রাই বলেন, ‘জলের তোড়ে ঘর গেল। কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। খামোখা নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব কেন? রাজনৈতিক দল আমাদের দেখবে?’