Heat Wave In West Bengal : বঙ্গে দুর্গতি কি হিট আইল্যান্ড থেকেই? ​মত ​আবহবিদদের – meteorologists says heat islands have formed across south bengal are rapidly changing climate


এই সময়: কেউ বলছেন ‘হিট আইল্যান্ড’, কারও বয়ানে সেটাই ‘হিট কোকুন’ বা ‘হিট পকেট’। এ যেন অদৃশ্য একটা বাটি উল্টো করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন শহর ও শহরতলির উপরে। সূর্যের তাপ বাটির মধ্যে ঢুকছে অবাধে। আর বাটির মধ্যে তৈরি হওয়া তাপ বেরিয়ে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। ফলে ভ্যাপসা গরমে জেরবার হচ্ছেন ওই ‘বাটির’ মধ্যের বাসিন্দারা।আবহবিদদের একাংশের মতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তৈরি হয়েছে এমন অজস্র হিট আইল্যান্ড। তাতেই দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাজ্যের আবহাওয়া মানচিত্র। টানা তিন দিন ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল কলকাতার তাপমাত্রা। এর পরে হালকা মেঘের দৌলতে দিনদুয়েকের ছাড়। বুধবার ফের পুরোনো ফর্মে মহানগর (৪০.৫)।

শুধু কলকাতা নয়, ৪০ ডিগ্রির নীচে নেমে আসা সল্টলেকও এ দিন অনায়াসে ৪০ ডিগ্রির ঘর পার করে ৪০.৮ ডিগ্রিতে। মেঘের আস্তরণ সরলেই যে রাজ্যের আবহাওয়া বদলে যাবে এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল হাওয়া অফিস। বাস্তবে হলোও তা-ই। মঙ্গলবারও রাজ্যের ন’জায়গার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির চেয়ে বেশি ছিল। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেটাই পৌঁছে গেল ১৯-এ!

সকাল ৬টা বাজতে না-বাজতেই যেন অকাতরে আগুন ঢালা শুরু করছেন সূর্যদেব। তবে সন্ধেয় সূর্য ডোবার পরেও কি আবহাওয়া খুব স্বস্তিদায়ক হচ্ছে? ট্যাঙ্কের জল ঠান্ডা হতে রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে। সকালে ৯টা বাজার আগেই সেই জল ফের গনগনে। এককথায় বলতে গেলে শহর ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কোথায়?

কেন এমন হচ্ছে? এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে আবহবিদদের একাংশ দায়ী করছেন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অতি দ্রুত নগরায়ন এবং অবাধে বৃক্ষনিধনকে। তারই পরিণাম ‘হিট আইল্যান্ড’। আবহাওয়া বিশারদ রবীন্দ্র গোয়েঙ্কা বলছেন, ‘গত কয়েক বছরের প্রবণতা যদি লক্ষ্য করা যায়, তা হলে দেখা যাবে কলকাতার চেয়েও তাপমাত্রা বেশি বাড়ছে ব্যারাকপুর এবং দমদম এলাকার। এ ছাড়া সল্টলেক এবং অতি সম্প্রতি নিউ টাউন চত্বরেও গরমের প্রাবল্য অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।’

আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে ২১ এপ্রিল ব্যারাকপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩.৭ ডিগ্রি। অতীতে ওই এলাকায় এমন ভয়াবহ তাপমাত্রার নজির বিশেষ নেই। সে দিন পাথুরে পুরুলিয়ার চেয়েও (৪৩.৩) বেশি গরম ছিল ব্যারাকপুর। এই ঘটনার উল্লেখ করেই ‘হিট আইল্যান্ডের’ প্রসঙ্গ টেনে রবীন্দ্র বলেন, ‘একটা সময়ে ব্যারাকপুর ও দমদমের মতো অঞ্চল বিখ্যাত ছিল ধনীদের বাগানবাড়ির জন্য। বহু পুরোনো এবং বড় বড় গাছে ওই এলাকা ভরে থাকত। কিন্তু গত ২০-২৫ বছরে সব গাছ কেটে বহুতল হয়েছে। জঙ্গলের বদলে কংক্রিট জঙ্গল গড়ে উঠেছে। কংক্রিট সকাল হলেই উত্তপ্ত হয়ে বিরাট এলাকাকে হিট আইল্যান্ডে পরিণত করে তুলছে।’

গরম চাটুতে বাংলা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘একটা নির্দিষ্ট এলাকায় কতগুলো গাছ থাকা উচিত তার একটা হিসেব আছে। গাছ এলাকায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কলকাতায় তো বটেই, তার সংলগ্ন এলাকাও যে ভাবে ক্রমশ মহানগরীর অংশ হতে চলেছে, সেটা খুবই চিন্তার।’ হিট আইল্যান্ড তত্ত্বে বিশ্বাসী আবহবিদদের যুক্তি, অতীতে যে তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধির নজির নেই এমন নয়।

কিন্তু ইদানীং পুরোনো রেকর্ডগুলো খুব তাড়াতাড়ি ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। ‘হিট আইল্যান্ড’ প্রসঙ্গে পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির (আইআইটিএম) আবহবিদ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘শুধু ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতেই যে আবহাওয়া ক্রমশ চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়ছে সে বিষয়ে সংশয় নেই। তবে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে কোনও একটি বিষয়কে দায়ী করার মতো জায়গায় আমরা এখনও আসিনি। হিট আইল্যান্ড তত্ত্ব এখনও পর্যন্ত প্রমাণিত নয়।’

পুনে আইআইটিএম-এর দাখিল করা তথ্য বলছে এপ্রিলের কলকাতা সর্বোচ্চ গরম দেখেছিল ১৯৫৪ সালের ২৫ এপ্রিল। সে দিন শহরের তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩.৩ ডিগ্রিতে। আবহবিদের প্রশ্ন, ‘তখন তো কলকাতা আজকের মতো কংক্রিট জঙ্গলে পরিণত হয়নি। তা হলে তখন এমন হয়েছিল কেন?’ এপ্রিলের কলকাতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার (৪২.২) নজিরও আজ থেকে ৬৪ বছর আগে, ২৯ এপ্রিল ১৯৬০-এর। তখনও শহরে সেই অর্থে নগরায়ন শুরু হয়নি।

হিট আইল্যান্ড তত্ত্ব নিয়ে আবহবিদরা একমত না হলেও গরমের প্রাবল্য নিয়ে অবশ্য কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছেন না। রাত পোহালেই রাজ্যের যে যে জায়গায় নির্বাচন, তার মধ্যে বালুরঘাটের তাপমাত্রা বুধবারই ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছে। শিলিগুড়ি (৩৯.৫) ও জলপাইগুড়িতে (৩৮.৮) ৪০ ডিগ্রির খুব কাছেই পারা। বুধবার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর রাজ্যে তাপপ্রবাহের সময়সীমা আরও একদিন বাড়িয়ে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করেছে। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, দার্জিলিং বাদে রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই হয় তীব্র তাপপ্রবাহ, না হলে তাপপ্রবাহ অথবা উষ্ণ এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *