কিন্তু হাইকোর্ট কী রায় দেবে, বিজেপি নেতারা সেটা কীভাবে আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন, তারমধ্যে একটা যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ইস্যুতে সুর চড়িয়েছেন।
শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে জোড়া জনসভা করেন তৃণমূল নেত্রী। দাঁতনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘বোমা ফাটাবে বলে ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নিল! আমরা চাকরি দিচ্ছি, বিজেপি চাকরি খাচ্ছে। ওরা একজনের চাকরিও দিতে পারে না, চাকরি খেয়ে নিতে জানে।’ শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে তিনি বলেন, ‘ওই রায়টা যে ওইদিন বেরবে তুমি ৪৮ ঘণ্টা আগে জানলে কী করে?’
এদিন পুরুলিয়ায় দলের কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে এসে প্রায় একই সুরে অভিষেক বলেন, ‘শুভেন্দু অধিকারী আগেই বলে দিয়েছিলেন বিস্ফোরণ ঘটবে। এর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?’ তৃণমূলনেত্রী এদিন ফের প্রশ্ন তোলেন, ‘চাকরিহারাদের কিছু হলে কী হবে? একজনের কিছু হলে তাদের পরিবারের লোকেরা তোমার বাড়ির সামনে আসবে। তারা কিন্তু বিচার চাইবে। এত মানুষের চাকরি খেয়ে নিয়েছে! স্কুলগুলো চলবে কী করে?’
তবে তাঁর সংযোজন, ‘বিচারপতিদের আমি কখনও অসম্মান করি না। গণতন্ত্র আজ কাঁদছে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আসলে চাইছে, এরা (চাকরিহারা শিক্ষকরা) যেন ভোটে কাজ করতে না পারে, কেন্দ্রীয় এজেন্সির লোক কাজ করবে।’ যদিও কমিশন সূত্রের খবর, যাঁদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের ভোটের ডিউটি করতে কোনও অসুবিধা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ফের বলেন, ‘অনেক সময়ে কাজ করতে গেলে ছোটখাটো ভুল হয়। সেই ভুল আমরা শুধরে নেব। আমরা চাকরি দিতে চাই। ১০ লক্ষ চাকরি রেডি আছে। কিন্তু সব ব্যাপারে ওরা (বিজেপি) আদালতে যাচ্ছে।’ বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের সুদ সমেত বেতনের টাকা ফেরতের যে নির্দেশ দিয়েছে আদালত, সে প্রসঙ্গে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘শ্রমদানের বিনিময়ে ওরা টাকা পেয়েছে। সেই টাকা কেউ ফেরত দিতে পারে?’
তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘গদ্দার, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, তিনি কারও কাছে কিছু নেননি? বলতে পারবেন, কত জন তাঁর হাত দিয়ে চাকরি পেয়েছে? পুরুলিয়ার লোকেরা রাস্তায় কেন বসেছিল? তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ!’ রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, ‘গদ্দার’ বলতে মুখ্যমন্ত্রী আসলে বিরোধী দলনেতাকেই বোঝাতে চেয়েছেন।
মহিষাদলের সভা থেকে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কেও চড়া সুরে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘যিনি বিচারের আসনে বসে সবার চাকরি খেতেন আর বিজেপি’র সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাঁর কাছ থেকে বিচার পাবেন? যিনি এখানে দাঁড়িয়েছেন, তিনি নিজেকে বিচারপতি ভাবছেন। বলছেন, আমাকে পদত্যাগ করতে হবে! আমাকে পদত্যাগ করতে বলার আগে নিজে দেহত্যাগ করুন। আগে নিজের লজ্জা ঢাকুন। আপনি বিচারালয়ের কলঙ্ক।’
কিন্তু অমরনাথ শাখা নতুন করে ৫৯ হাজারের চাকরি চলে যাবে বলে কীভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন? বিজেপি বিধায়কের ব্যাখ্যা, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। তৃণমূল সরকার যে ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবহেলা করেছে, যেভাবে কোর্টকে অবমাননা করেছে, তারই প্রেক্ষিতে পাপ যেমন বাপকেও ছাড়ে না, তেমনই আইন আইনের পথেই যাচ্ছে। সেজন্যই আমার অভিমত, এই যে ২৬ হাজার নিয়োগ বাতিল হলো, হয়তো ৩০ তারিখে আরও ৫৯ হাজার হবে।’
যদিও তাঁকে পাল্টা নিশানা করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘ক’দিন আগে বিরোধী দলনেতা বিস্ফোরণের কথা বলেছিল। আজকে আর একজন বলছেন, আরও ৫৯ হাজার লোকের চাকরি যাবে। তাহলে কি বিজেপির অফিস থেকে রায় টাইপ করে দেওয়া হচ্ছে নাকি? নাকি যখন রায় টাইপ হচ্ছে, তখন বিজেপির কোনও লোক সেখানে বসে থাকছে?’
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘রাজ্য বিপাকে পড়ছে বলে ওরা (বিজেপি) মনে করছে। এত লোকের চাকরি যাচ্ছে আর বিরোধী দলনেতা, বিজেপি বিধায়করা উল্লাস করছেন!’ পাল্টা শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করে ভুয়ো চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে যাঁরা মেধায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি থেকে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এদিন বিজেপি’কে আক্রমণ শানানোর পাশাপাশি আরএসএস-কেও একহাত নিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। দাঁতনের জনসভায় মমতা বলেন, ‘কেশিয়াড়িতে আরএসএস-এর একটা বড় স্কুল আছে৷ ওরা অনেক সম্পত্তি করেছে৷ আগে আমি ভাবতাম, আরএসএস মানে ত্যাগী। ওদের মধ্যে কিছু ভালো লোক ছিল৷ আজকে ভোগ করতে করতে এমন ভোগী হয়ে গিয়েছে, যে ত্যাগ ছেড়ে দিয়েছে। যার জন্য বিজেপি এত নোংরামি করছে৷’