তাপমাত্রার পারদ লাফিয়ে লাফিয়ে চড়ছে। তাতে মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে লঙ্কা, উচ্ছে, টোম্যাটো, ফুলকপি, বেগুন ও নানা ধরনের শাক। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও কালবৈশাখীর দেখা নেই। যার জেরে নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার। সবচেয়ে কষ্টে যাঁরা এই সময়ে খোলা মাঠে টানা রোদে একটানা কাজ করেন। চাষিরা পুড়ছেন।প্রবল তাপপ্রবাহে পুড়ছে লাউ, কুমড়ো, পুঁইশাক, উচ্ছে, ঝিঙে, পটলও। চাষিরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত গরমের জন্য সব গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। জল সেচ করেও রক্ষা হচ্ছ না। যাঁরা সেচের মাধ্যমে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, সেই চেষ্টাও মাঠে মারা যাচ্ছে। কারণ কৃত্রিম জলসেচে গাছ বাঁচলেও ফলন ঠিকঠাক হচ্ছে না।
ভাঙড়ের ভগবানপুর, শানপুকুর, পোলেরহাট, ভোগালি, নারায়ণপুর, শাঁকশহরের উর্বর জমিতে ফি বছর ব্যাপক সব্জির চাষ হয়। এই গরমেও মাঠজুড়ে উচ্ছে, পটল, ঢেঁড়স, কুমড়ো, লাউ, চিচিঙ্গা খেলা করছে। যদিও বৃষ্টির অভাবে আর মাত্রাতিরিক্ত গরমে বেশির ভাগ গাছই শুকিয়ে যাচ্ছে। ভাঙড় ২ ব্লকের সাতুলিয়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেল প্রখর রোদে ফসল বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নূর আলম, আব্দুল মালেকরা।
আব্দুল মালেক বললেন, ‘৬ কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছিলাম। যেখান থেকে কাঠা প্রতি এক কুইন্টাল পটল ওঠার কথা সেটাই এখন উঠছে মাত্র ৪০ কেজি। প্রকৃতির রোষানালে ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে, ফলের বৃদ্ধি হচ্ছে না।’ আর এক চাষি কার্তিক মণ্ডলের বক্তব্য, ‘এই গরমে বাজারে শসার ব্যাপক চাহিদা আছে। কিন্তু খেতে শসা নেই। গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, ফল লাল হয়ে যাচ্ছে। ছেলে-বৌ নিয়ে দু’বেলা মাঠে খাটছি। কিন্তু পয়সার মুখ দেখছি কই?’
চাষিরা জানালেন, তাঁরা ফসলের দেখভাল করার জন্য আগে বেলা বারোটা পর্যন্ত মাঠে থাকতেন। কিন্তু এখন যা রোদের তেজ দশটা বাজলেই বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। আবার বিকেল পাঁচটার আগে মাঠে পা দেওয়া যাচ্ছে না। রাম মণ্ডল নামে এক চাষি বলেন, ‘এ সময় ফি বছর কালবৈশাখী হয়। এই বছর সে সবের বালাই নেই। বাজার থেকে গাঁদা ফুলের চারা কিনে মাটিতে রোপণ করেছিলাম। গরমে সেই গাঁদা মরে গিয়েছে।’
ভাঙড়, রাজারহাট, ক্যানিংয়ের অনেক চাষি এ সময় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, ক্যাপসিকাম চাষ করেন। সেই সব চাষিদেরও মাথায় হাত। এই সময় অনেকেই আম, জাম, লিচু, লেবু, কাঁঠাল বেচে দু’পয়সা রোজগার করেন। কিন্তু এ বছর আমের ফলন একপ্রকার হয়নি বললেই চলে।
ভাঙড়ের এক চাষি অরুণ নস্কর বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় আমের বোঁটা শুকিয়ে আম মাটিতে ঝড়ে পড়ছে। লিচু, কাঠাল, জাম, সবেদা কোনও কিছুই ঠিক মতো বাড়ছে না জলের অভাবে।’ উত্তরের রাজারহাট ব্লকেও বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন নার্সারির মালিকরা। রাজারহাটের চাঁদপুর অঞ্চলে শতাধিক নার্সারিতে গোলাপ-সহ অন্যান্য ফুলের গাছ, মেক্সিক্যান ঘাস শুকিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করছেন চাষিরা।