পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টির অভাব রয়েছে জেলায়। আমের মরশুমের শুরুতেই ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মালদায়। মাথায় হাত আম চাষিদের। এই বছর হয়তো লাগামছাড়া বৃদ্ধি পাবে আমের দাম বলেই মনে করছেন চাষিরা। প্রচণ্ড রোদে আমের মুকুল শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। চাষিরা চেষ্টা করছেন বাগানে জল স্প্রে করে আম টিকিয়ে রাখার। কিন্তু আমের ভালো ফলনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি নেই। এমনিতেই এবার মালদায় গাছে একটু দেরিতে আমের মুকুল এসেছিল। তার উপর গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ তীব্র গরমের কারণে আমের সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন চাষিরা।
উদ্যান পালন দফতর কী বলছে?
মালদা জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতর জানাচ্ছে, মালদা জেলায় ৩১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমি জুড়ে আম ফলন হয়। গত বছর ৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। তবে এবারে জেলায় আম উৎপাদন অনেকটাই কম হবে। মালদা জেলা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক সামন্ত লায়েক বলেন, ‘বর্তমানে যা আবহাওয়া গোটা জেলে জুড়ে চলছে, তাতে এবার অনেকটাই আম উৎপাদন কম হবে। গতবছর গোটা জেলা জুড়ে যে আম উৎপাদন হয়েছে, এবারে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আমের ফলন কেমন?
উদ্যান পালন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর ল্যাংড়া প্রজাতির আমের ফলন অনেকটাই কম হবে। লক্ষণভোগ, আশ্বিনা আমের ফলন কমতে পারে। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে এ বছর সব মিলিয়ে আমের ফলন পৌনে তিন লাখের কাছাকাছি থাকবে। যা গতবারের তুলনায় অনেকটাই কম। সেক্ষেত্রে বাজারে আমের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা।
চাষিরা জানাচ্ছেন, এখনও যা পরিস্থিতি তাতে এবারে ল্যাংড়া প্রজাতির আমের দাম অনেকটাই বাড়বে জেলাতে। এখনও পর্যন্ত আমের যা ফলন হয়েছে তাতে হিমসাগর প্রজাতির আম উৎপাদন ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ হবে। ল্যাংড়া আমেরও অনেকটাই উৎপাদন কম হবে। লক্ষণভোগ ৮০ শতাংশ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা। তবে আম্রপালি, গুটি আমের উৎপাদন ভালো হবে।
আমের দাম কেমন হতে পারে? (গাছ থেকে আম সংগ্রহের পর বাজারে চাহিদা এবং জোগানের উপর দাম ওঠানামা করবে, ২০ – ৩০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা)
আমের প্রকারভেদ | গত বছরের দাম | চলতি বছরের দাম (সম্ভাবনা) |
ল্যাংড়া | ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কিলো | ৩৬ থেকে ৪১ টাকা কেজি |
হিমসাগর | ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিলো | ৪৮ থেকে ৫৩ টাকা কেজি |
লক্ষণভোগ | ৩০ থেকে ৩৫ টাকা | ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি |
আম্রপালি | ২০ থেকে ২৫ টাকা কিলো | ২৬ থেকে ৩১ টাকা কেজি |
ফজলি | ২০ থেকে ২৫ টাকা কিলো | ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি |
চাষিরা কী জানাচ্ছেন?
আম চাষি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণে জেলায় আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে এবার অনেকটাই বাধা পড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী জোগান কম। সে ক্ষেত্রে বাজারে আমের দাম অনেকটাই বাড়বে। গত বছর বেশিরভাগ আম ২০ থেকে ২৫ টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়েছিল। ফলন অনুযায়ী ২০ থেকে ৩০ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে ল্যাংড়া, হিমসাগর, লক্ষণভোগ আমগুলির দাম বাড়বে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই মালদার আম বাজারে আসবে। আম কিনতে এবার হিমশিম খেতে হতে পারে ক্রেতাদের।