পাকা আমের প্রতি পেস্তার দুর্বলতার কথা জানতেন তার পরিবারের সবাই। বাড়িতে আম এলে সেখান থেকে কিছুটা অংশ যে ওর পেটে যাবে এর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। আম কাটার সময়েই তাকে কিছুটা চাখতে দিতে হয়। সেই কারণে শুরু থেকেই সে যে থানা গেড়ে বসে থাকে, সেটা পড়শিরাও জানেন। তবে অন্য গোল্ডেন রিট্রিভারদের মতোই পেস্তারও মান-অপমানবোধ একেবারে তলানির দিকে।বিশেষ করে পছন্দের খাবার পেলে তাকে সামলানো মুশকিল। সে দিনও বাড়িতে আম কাটা হচ্ছিল। পাশে একটা প্লেটে কাটা আমগুলো রাখা ছিল। সেখান থেকেই আচমকা একটা আঁটি তুলে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই গিলে ফেলেছিল সে। পেস্তার অভিভাবকরা আশা করেছিলেন দু’একদিনের মধ্যেই ওই আঁটি বেরিয়ে যাবে। তবে তেমনটা হয়নি। গোলমালটা ধরা পড়ল প্রায় দু’মাস পরে। পেস্তার বমি থামাতে না পেরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের মৈত্রী ভাবনা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে। পরীক্ষা করে দেখা যায় ওই আঁটি পেস্তার বৃহদন্ত্রে আটকে থেকে অন্ত্রের কিছুটা অংশ পচিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পর তাকে সুস্থ করা গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাদ দিতে হয়েছে তার বৃহদন্ত্রের কিছুটা অংশ।
চার বছরের ফ্রেঞ্চ ম্যাস্টিফ রিঙ্গোর দাপটে শুধু তার বাড়িই নয়, পাশের বাড়ির লোকজনও অনেকটা নিরাপদ মনে করতেন। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে সেই রিঙ্গোর ওজন ৬০ কেজি থেকে কমে ৩০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। খাওয়ায় রুচি নেই। যখন-তখন বমি আর পায়খানা করে ফেলছিল সে। কোনও চিকিৎসাতেই কাজ দেয়নি। পরে তার পেটের এক্স-রে করে দেখা যায় সেখানে আটকে রয়েছে একটি আমের আঁটি। অস্ত্রোপচারের পর রিঙ্গো পুরোপুরি ফিট। মাসখানের মধ্যেই সে পুরোনো দাপট ফিরে পেয়েছে। শুধু তার বাড়িতে আম এলে সেটা যাতে কোনও ভাবেই রিঙ্গোর মুখ পর্যন্ত না পৌঁছয়—সেটা অবশ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাড়িতে যদি পোষ্য থাকে, তাহলে আমের আঁটি থেকে সাবধান। কারণ আঁটি কিন্তু আপনার প্রিয় পোষ্যর প্রাণহানির কারণ হতে পারে। এমনই সতর্কবার্তা পশুচিকিৎসকদের। নামে মাংসাশী হলেও বাড়ির কুকুরদের অনেকেরই খাদ্যাভ্যাস বেশ সন্দেহজনক। গাজর, শসা থেকে শুরু করে ফুলকপি—কোনও কিছুই বাদ দেয় না এমন পোষ্যর সংখ্যাও কম নয়। পশুচিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পাকা আমের প্রতি কুকুরদের আকর্ষণ খুবই বেশি। বাড়ির লোকজনের থেকে ভাগ নেওয়ার পাশাপাশি ফেলে দেওয়া খাবারের জায়গা থেকে আমের আঁটি বের করে চিবিয়ে নিতেও ওরা দ্বিধা করে না। আর তাতেই বিপদ বাড়ে।
সল্টলেকের মৈত্রী ভাবনা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘আমের সিজ়ন এলেই এই ধরনের সমস্যা আমাদের কাছে আসে। পোষ্য—বিশেষ করে পোষা কুকুর আমের আঁটি খেয়ে ফেলে অসুস্থ হয়ে হওয়ার নজির বাড়ছে।’ ওই পশু হাসপাতালের চিকিৎসক শ্রীজিতা ঘোষ বলছেন, ‘অনেক সময়েই বোঝা যায় না কী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত যখন আসল কারণটা খুঁজে পাওয়া যায়, তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে। এমন ঘটনা খুব বেড়েছে। তাই আমাদের পরামর্শ, বাড়িতে আম আনলে পোষ্যদের নিয়ে একটু সতর্ক থাকুন।’