প্রচার শেষ হয়েছে শনিবার। কিন্তু রিল চলছে এখনও। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম-বিজেপি-তৃণমূল, কেউ বাদ নেই। ও আকাশ সোনা সোনা, এ মাটি সবুজ সবুজ…। সত্তরের দশকে ‘অজানা শপথ’ সিনেমার সেই গান এ বার হিট হয়েছে নদিয়ার ভোটের বাজারে। স্বর্ণযুগের ওই বিখ্যাত গানকে সম্বল করে রিল বানিয়েছে তৃণমূল। সিনেমায় সাইকেল চালাতে চালাতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ রায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিপে গাওয়া সেই গানের সঙ্গে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের প্রচার-গাড়ি ছোটানোর নানান দৃশ্য দিয়ে পেশাদারি দক্ষতায় ভিডিয়ো বানানো হয়েছে।হুড খোলা গাড়িতে যেতে যেতে কখনও তিনি সমর্থকদের ফুল মালা নিচ্ছেন, হাত নাড়ছেন। পথের দু’ধারে দাঁড়ানো মহিলারা কেউ উলু দিচ্ছেন, শাঁখ বাজাচ্ছেন, সব ছবি ওই গানের সঙ্গে জুড়েছে। এখানেই শেষ নয়, সরকার ও দলের উন্নয়নের গানের সঙ্গে বিভিন্ন দিনের প্রচারের বাছাই মুহূর্তকে জুড়ে রিল বানানো হয়েছে। মহুয়ার নিজস্ব টিম ছাড়াও দলের কর্মী নেতারা যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে বিশেষ পারদর্শী তাঁরা এসব বানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার যুব নেতা সুশান্ত মণ্ডল।
মহুয়ার বিপরীতে দাঁড়ানো বিজেপির অমৃতা রায় নদিয়া রাজবংশের বধূ। তবে এমন নয় যে তিনি রাজ আমলের সাবেকি কৌশল নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। বাষট্টি বছর বয়সেও কী ভাবে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন, পারিবারিক আভিজাত্য ভুলে দলের সাধারণ কর্মীর বাড়িতে বসে দুপুরের আহার করছেন, সেই সব বাছাই করা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। বিজেপির মিডিয়া সেলের নবদ্বীপ জোনের এক কর্তা সুশেন দেবনাথ বলেন, ‘এগুলো বেশির ভাগই আমাদের দলের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের উদ্যোগ বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছেন।
হাইটেক প্রচারে পিছিয়ে নেই সিপিএমও। ‘টুম্পা তোকে নিয়ে ব্রিগেড যাবো’ কিংবা ‘গোয়াল ঘরে চোর ঢুকেছে কোথায় সিবিআই’-এর মতো দু’তিন বছর আগের সুপারহিট গান এবার না বাজলেও ভোট নিয়ে কমরেডদের একগুচ্ছ গান এবারও ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব গানের সঙ্গে কৌতুক ভরা দেওয়াল লিখন, রেডিও জকির ঢঙে পুরুষ ও মহিলা কণ্ঠে ভোটের সংলাপ দেদার ছড়ানো হয়েছে। সিপিএমের কৃষ্ণনগর আইটি সেলের কর্মী কৌশিক দত্ত বলেন, ‘২০১৯ সালের তুলনায় এ বার কৃষ্ণনগরে ভোটার বেড়েছে এক লক্ষ তিরিশ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগই বয়সে নবীন। এই নতুন ভোটারদের টানতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও ড্রাইভ দিয়েছি আমরা।’
লোকসভা থেকে বহিষ্কারের পরে একই কেন্দ্র থেকে মহুয়াকে প্রার্থী করে তাঁকে ফের জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্টোদিকে মহুয়ার জয় আটকাতে পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনকী খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গোটা দেশের মধ্যে তাই অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র কৃষ্ণনগর। সেই কেন্দ্রে আজ ভোট হলেও ভোট-বাজারের টগবগে ভাব এখনও যেন রয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন দলের এমন লড়াই দেখে কৃষ্ণনগরের এক ভোটার রঞ্জন সাহার প্রশ্ন, ‘রিলের লড়াই তো অনেক দেখলাম, কিন্তু কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেলপথ কি আমরা দেখে যেতে পারব?’