গত লোকসভা ভোটেও কর্মীদের ভিড়ে গমগম ছিল বোলপুরের নীচুপট্টির তিন তলা পার্টি অফিস। সকাল সকাল ভোট দিয়ে জেলা পার্টি অফিসের দোতলার ঘরে অন্য নেতাদের সঙ্গে ঘর আলো করে বসে থাকতেন অনুব্রত মণ্ডল। ৪-৫টা ফোন থেকে এক এক করে ব্লকের নেতাদের ফোন করে বলতেন, ‘আরও একটু হাত চালাও।’ সোমবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা বোলপুর পুরসভার সামনে জেলা তৃণমূল অফিসে এসেছিলেন বটে, তবে সকালে নয় সন্ধ্যায়। তখন অবশ্য ভোটের সব শেষ।এ বার যেন কোনও তাপ উত্তাপ নেই। কেষ্ট তিহাড় জেলে থাকায় ভোট পরিচালনার দায়িত্বে এ বার ছয় সদস্যের কোর কমিটি। তাঁরা সকলেই কেষ্টর ‘কলাকৌশল’ খুব কাছ থেকে দেখেছেন বটে। তবুও কি তাঁর বিকল্প হওয়া সম্ভব? মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বোলপুরের বুথে ভোট দিয়ে ইলামবাজার হয়ে সোজা চলে যান মুরারই। সেখানকার পার্টি অফিসে বসে দিনভর ভোট পরিচালনা করেন।
তবে বোলপুর থেকে রওনা হওয়ার আগে একবার জেলা পার্টি অফিস ঘুরে যান তিনি। বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের রামপুরহাট বিধানসভা এলাকার বাইরে যাননি। সারাদিন পার্টি অফিসে বসে ভোটের খোঁজখবর নিয়েছেন। বিকাশ রায়চৌধুরী সকালে ভোট দিয়ে সিউড়িতে এসে পার্টি অফিসে হাজিরা দিয়ে সোজা চলে যান দুবরাজপুরে। কোর কমিটির আর এক সদস্য রানা সিংহ লাভপুরে বসে নিজের গড় সামলান সারাদিন। সকলেই ভোট শেষে ফিরেছেন বোলপুরের প্রায় ফাঁকা অফিসে।
এ দিন বড় বড় নেতারা নিজেদের গড় রক্ষা করতে ব্যস্ত থাকার কারণে মাঝারি নেতা ও পুরসভার কাউন্সিলররা পার্টি অফিসে ঢোকার মুখে সিঁড়ির কাছে চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন সারাদিন। তবে দোতলায় কেষ্টর বসার ঘরে কেউ যাননি। অথচ আগে কেষ্টর চেয়ারের পাশে বসে থাকতেন মন্ত্রী-নেতারা। ভোটের দিন সকাল থেকেই পার্টি অফিসের একতলার ঘরে চলত খাওয়া দাওয়া। বিশাল বপু নিয়ে তিনি হেলতে দুলতে চলে আসতেন পার্টি অফিসে।
দেহরক্ষী সেহগল হোসেনের কাঁধে ভর দিয়ে দোতলায় পৌঁছে যেতেন কেষ্ট। সঙ্গে সঙ্গেই সামনে হাজির হতেন ওমর, বাপি, অর্করা। কেষ্টসঙ্গী বোলপুর পুরসভার কাউন্সিলার ওমর শেখ বলেন, ‘দল জিতবে এটা ঠিক। কিন্তু আজকের দিনটা একদমই ভালো লাগল না। দাদার কথা ভেবে চোখে জল আসছিল বার বার। পার্টি অফিসে বেশিক্ষণ বসে থাকতে ভালো লাগেনি। দাদার আসন যে ফাঁকা। সব কিছুর মধ্যেই কেমন একটা নেই নেই ভাব।’
এদিন চড়াম চড়াম বাদ্য না বাজলেও সকালের ফিকে আবহাওয়াটা বেলা বাড়তেই কিছুটা উধাও হয়ে যায় বোলপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে গোয়ালপাড়া এলাকায়। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলারের স্বামী বাবু দাসকে দেখা যায়, দলের কর্মীদের নিয়ে থালাভর্তি বাতাসা, নকুলদানা বিলি করতে। সঙ্গে ঠান্ডা জল। ঠিক যেমনটা হতো অনুব্রত মণ্ডলের সময়ে ভোট পর্বে। বীরভূমের রাঙামাটিতে এটাই সান্ত্বনা। জেলবন্দি হলেও অনুব্রতের যেন ‘উজ্জ্বল উপস্থিতি’।